সমাজের কারিগর শিক্ষক। তবে সেই শিক্ষকই যদি শেখায় চুরি করতে, তাহলে তা সমাজের পক্ষে যথেষ্ট লজ্জার। আর এমনই এক শিক্ষকের জন্মদিন আমরা পালন করে আসি ‘শিক্ষক দিবস’ হিসেবে যিনি ছাত্রের থিসিস চুরির অভিযোগে বিদ্ধ। তাই অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, শিক্ষক দিবস হিসেবে রাধাকৃষ্ণণের জন্মদিনে চিহ্নিত করা আদৌ কি ঠিক? সালটা ছিল ১৯২৯। লেখা চুরি নিয়ে হইচই ‘মডার্ন রিভিউ’ পত্রিকার জানুয়ারির সংখ্যায়। অভিযোগ দায়ের করেছেন মীরাট কলেজের লেকচারার যদুনাথ সিংহ। যদুনাথ দাবী করলেন, তাঁর দুইখন্ডের গবেষণা-পত্র ‘ইন্ডিয়ান সাইকোলজি অব পারসেপশন’। যে লেখা তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ স্টুডেন্টশিপের জন্যে ১৯২২ ও ১৯২৩ সালে দুই কিস্তিতে জমা দেন, সেখান থেকে চুরি হয়েছে লেখা। আর এই চুরির অভিযোগ ছিল তাঁরই শিক্ষক সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের নামে।
ডঃ রাধাকৃষ্ণণ ১৯২৮ সালে একটি বই প্রকাশ করেছিলেন, ‘দি বেদান্ত অ্যাকর্ডিং টু শঙ্কর অ্যান্ড রামানুজ’ নামে। যে বইটা আসলে তাঁরই আরেকটি বই ‘ইন্ডিয়ান ফিলজফি ভলিউম ২’র অষ্টম ও নবম অধ্যায়ের পুনর্মুদ্রণ ছিল। এই মূল বইতেই প্রফেসর যদুনাথ সিংহের গবেষণা পত্র থেকে প্রচুর অনুচ্ছেদ হুবহু নেওয়া ছিল। প্রফেসর যদুনাথ সিংহের সৌভাগ্যক্রমে, তিনি তাঁর গবেষণা পত্রের কিছু অংশ ইতিমধ্যেই ১৯২৪ ও ১৯২৬ সালে মীরাট কলেজের ম্যাগাজিনে প্রকাশিত করে ফেলেছিলেন।
এই প্রমাণ হাতে রেখেই যদুনাথ মামলা দায়ের করেন। তিনি রাধাকৃষ্ণণের থেকে কুড়ি হাজার টাকা দাবি করেন। উল্টোদিকে কম যান না রাধাকৃষ্ণণও। তিনিও পালটা এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করে বসেন। তবে রাজনীতির প্রকোপের সেকাল আর একাল! ওপর মহল থেকে চাপ আসতে শুরু করে যদুনাথের ওপর। অনেক প্রখ্যাত অধ্যাপক কোর্টে সাক্ষী দিতে রাজি হননি যদুনাথের পক্ষে। অভিযোগ ওঠে, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী নিজস্ব প্রভাব খাটিয়ে বিষয়টা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন যথারীতি। অন্যদিকে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকাও ছিল সেই সময় আশ্চর্যজনক। তাঁদেরই এক অধ্যাপকের সঙ্গে তাঁদেরই এক গবেষকের মামলা চলছে, তাঁদেরই শিলমোহর পাওয়া গবেষণা নিয়ে। অথচ এ মামলায় তাঁরা কোনো উচ্চবাচ্যও করেনি।
শেষমেশ আর্থিক ক্ষমতা না থাকায় হার মানেন যদুনাথ সিংহ। ‘আউট অফ কোর্ট’ সেটলমেন্ট করতে বাধ্য হন তিনি। সম্ভবতঃ ১৯৩৩ সালে, মে মাসের প্রথম সপ্তাহে হাইকোর্টএর ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ছিলেন ফণীভূষণ চক্রবর্তী। তাঁর সামনে দুটো মামলারই ‘ডিক্রি’ জারি করে মিটিয়ে নেওয়া হয় মামলা। তবে মামলা নিষ্পত্তির শর্তগুলো কী ছিল তা আজও অজানা।
Discussion about this post