সরস্বতী পুজো নাকি বাঙালির ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’। স্কুলে, ক্লাবে বাগদেবীর আরাধনার সঙ্গে সঙ্গে শহরের বুকে অজস্র ‘প্রেম’ গড়ে ওঠার সাক্ষী থাকে সরস্বতী পুজো। এই শহরে দুর্গাপুজোর পর বোধহয় সরস্বতী পুজোর জৌলুসই সবচেয়ে বেশি। সে কালের বাবুবিলাসের কলকাতায় বাগদেবীর আরাধনাতেও জাঁকজমকের কোনও খামতি ছিল না। সরস্বতী পুজোতে চলত একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার প্রতিযোগিতা। সে দিন সন্ধ্যায় কোনও কোনও বাড়িতে বসত ধ্রুপদী সঙ্গীতের আসর। কোথাও বসত কবি গানের লড়াই তো কোথাও বা খেমটার আসর। কোথাও আবার সে দিন সম্মান জানানো হত বিদগ্ধ পণ্ডিতদের। কোনও কোনও বাড়িতে সরস্বতী পুজোর দিন হত ছোটদের হাতেখড়ি।
সরস্বতী পুজোর দিন বি কে পালের পাঠশালায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে সরা বিলি করা হত। এতে থাকত লুচি, নানা রকমের মিষ্টি ও ফল। সেই পাঠশালা আজ না থাকলেও ১১৬ বছরের পুরনো শোভাবাজার বেনিয়াটোলা স্ট্রিটের বি কে পালের বাড়ির পুজোটি ঐতিহ্যে অটুট। অতীতের সময়ে এই সরস্বতী পুজোয় কাঠের সিংহাসনের উপর দেবী এখানে পদ্মাসনে দাঁড়িয়ে। দু’পাশে চারটি সখী পরিবেষ্টিত। সরস্বতীর হাতে থাকে রুপোর বীণা। বিশেষ উল্লেখযোগ্য এখানে কিন্তু দেবীর বাহন হাঁস থাকে না। শোনা যায় ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করার আগে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর নাকি এমন জাঁকজমক করে সরস্বতী পুজো করতেন যে, কলকাতা শহরে গাঁদা ফুল ও সন্দেশের আকাল দেখা দিত।
সেই সময় পুজোর আগের দিন রাত জেগে নানা রঙের কাগজ কেটে, শিকল তৈরি করে সেই মণ্ডপ সাজানো হত। মণ্ডপে জ্বলত হ্যাজাকের আলো। তারপর এক দিন সব কিছুই আধুনিক হতে লাগল। হারিয়ে গেল বাঙালির পুজো পার্ব্বণের অনেক কিছুই। আর ক্রমেই সরস্বতী পুজোও হয়ে গেল বাঙালির ভ্যালেনটাইন্স ডে!
Discussion about this post