পরিবর্তনই জীবনের নিয়ম, এ কথা ধ্রুব সত্য। সময়ের সাথে চারপাশের পরিবেশ পাল্টে যাওয়া তাই আশ্চর্যের কিছু নয়। আজকের যা কিছু তা বদলে গিয়ে আগামীতে অতীতের তকমা নিয়ে নেয়। ঠিক তেমনই আমাদের আশপাশটার রূপ আগে কেমন ছিল মাঝে মধ্যে জানতে ইচ্ছে করে। তেমনই একটি স্থান নবদ্বীপ ঘাট স্টেশন। যার রূপ পাল্টে গেলেও অস্তিত্ব একেবারে মুছে যায়নি।
এ অস্তিত্বের ছোঁয়া পেতে গেলে ফিরে যেতে হবে সেই সত্তরের দশকে। নবদ্বীপের গঙ্গার পাড়ে ছিল স্বরূপগঞ্জ নামক একটি জায়গা। এ জায়গা দেখলে বোঝা যেত প্রকৃতির সৃষ্টি কত সুন্দর হতে পারে! চারদিকে ঝোপঝাড় আর বটের ঝুড়ির অদ্ভুত সৌন্দর্য্য। আর এই গাছ গাছালির মধ্যেই লুকিয়ে ছিল নবদ্বীপ ঘাট স্টেশন। এ স্টেশন থেকে ট্রেন চলতো শান্তিপুর অবধি। আর সে ট্রেন যেন খেলনার সমান।
ছোট্ট ট্রেন তার ছোট্ট লাল রঙের স্টেশন, দৃশ্যটা যেন কোনো গল্পের বইয়ের ছবি। তবে তা বাস্তবেই ছিল। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, ছিল যখন গেলো কোথায়? দুটো সরু রেল লাইন একটু দূরে গিয়ে আবার মিলে গেছে। দূর থেকে দেখে গাছের ডালের মত লাগতে পারে। এই ছোটো লাইনের পোষাকি নাম ছিল ‘ন্যারো গেজ’ বা ‘লাইট রেলওয়ে’। তবে ট্রেন বলতে যে গতি আমরা কল্পনা করতে পারি এ ছিল তার বিপরীত। মাত্র তিনটি কামরা নিয়ে এ ট্রেন চলতো ভীষণ ধীর গতিতে। ঘন্টায় ১৫-২০ কিমি ছিল এর গতিবেগ।
এ গতির আগে অবশ্য কোনো ব্যক্তি সাইকেল বা স্কুটি নিয়ে তার আগে পৌঁছে যেতে পারে। বর্তমানে যদিও এর অস্তিত্ব প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। স্বাধীনতার পর নানান রকম উন্নতি সাধন হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা পাল্টে গেছে। তবে পরিবর্তনের সাথে এই ‘ন্যারো গেজ’কে ‘ব্রডগেজ’-এ রূপান্তরিত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। তবে সড়ক ব্যবস্থার ব্যবহার বেড়ে চলায় তার আর প্রয়োজন হয়ে ওঠেনি। আর তাই পুরনো শান্তিপুর টু নবদ্বীপ ন্যারো গেজ ট্রেন স্মৃতির পাতায় ভালো থাক।
Discussion about this post