আজ ১৫ই মার্চ। মেজর সন্দীপ উন্নিকৃষ্ণনের জন্মদিন। নামটার সাথে অপরিচিত কি আপনারা? চলুন তবে শুধু নাম নয়। এই বিশেষ মানুষটার জন্মদিন কেন স্মরণীয় সেই কথাই বলি।
২০০৮ এর ২৬ শে নভেম্বর। ব্ল্যাক টর্নেডো অপরেশন তখন তুঙ্গে। দক্ষিণ মুম্বাইয়ের ওবেরয় ট্রাইডেন্ট, তাজ হোটেল, নরিম্যান হাউস একের পর এক ধুলিসাৎ করে চলেছে জঙ্গিরা। নগরবাসী থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনী লুটিয়ে পড়ছে ধীরে ধীরে মাটিতে। আতঙ্ক আর রক্তে ভাসছে গোটা মুম্বাই। ভয় পিছুটান কাটিয়ে মেজর সন্দীপ উন্নিকৃষ্ণন তখন দশজন কমান্ডো ও সুনীল যাদবকে নিয়ে ঢুকে পড়লেন তাজহোটেলে। জঙ্গিরা তখন একটা ঘরে কয়েকজন মহিলাকে পণবন্দী করে ভিতর থেকে তালা দিয়ে রেখেছে। কমান্ডোদের বললেন, “কেউ উপরে উঠে এসো না , আমি একা হাতে সামলে নেবো “। মেজর উন্নিকৃষ্ণন সিঁড়ির ধার ঘেঁষে উঠে চললেন টানা চারতলায়। হদিশ পেলেন সেখানেই আটক রয়েছে মহিলারা। সঙ্গী সুনীলকে নিয়ে দরজা ভেঙে ঢোকেন ভেতরে। শুরু হয় গুলির লড়াই। সুনীলকে বাঁচাতে উন্নিকৃষ্ণন তাঁকে বাইরে ঠেলে একাই শত্রুদের টার্গেট করে গুলি ছুঁড়তে থাকেন। আর শত্রুরাও গুলি চালাতে চালাতেই একটু করে পালাতে থাকে। তারপরই হঠাৎ পেছন থেকে মাথায় লাগল গুলিটা। রক্ত বেরিয়ে এল গলগল করে। রক্তমাখা শরীরটা লুটিয়ে পড়ল মাটিতে। কফিন করেই ফিরলেন বাড়ির সামনে।
প্রাক্তন ইসরোর অফিসার কে. উন্নিকৃষ্ণন ও ধনলক্ষ্মী উন্নিকৃষ্ণনের একমাত্র ছেলে ছিলেন সন্দীপ উন্নিকৃষ্ণন। কোনোদিনই চাননি ছেলেকে মিলিটারিতে পাঠাতে। কিন্তু ছেলের জেদের সামনে হার মেনে নেন তাঁরা। সবসময় ভয়ে সিঁটিয়ে থাকতেন ছেলেকে হারানোর চিন্তায়। আর সেই দুশ্চিন্তাই সেদিন সত্যি হয়ে দাঁড়ালো। জীবিত মা বাবার সামনে ভারতীয় পতাকা জড়ানো ছেলের মৃতদেহটা এল। ২০০৯ সালের ২৬ জানুয়ারি ৩১ বছর বয়সী এই শহীদকে ভারতের সর্বোচ্চ সামরিক পুরস্কার ‘অশোক চক্র’ দিয়ে সম্মানিত করা হয়। মৃত্যুর আগে অবধি তিনি বলেই গিয়েছেন,”কেউ উপরে উঠে এসো না, আমি একা হাতে সামলে নেবো।“ আজ সেই শহীদের জন্মদিনে ভারতীয় হয়ে একটা স্যালুট তো দেওয়াই যায় তাই না!
Discussion about this post