প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি আমাদের চির সবুজ বাংলাদেশ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত বাংলাদেশে দর্শনীয় স্থানের কমতি নেই। বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষ এই সৌন্দর্য্য দেখতেই ছুটে আসেন। আয়তনে ছোট হলেও বাংলাদেশে ভ্রমণের জায়গা অনেক। পাহাড়, সাগর, স্থাপত্য– সবরকম পর্যটন আকর্ষণই আছে এখানে। তেমনই বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর জায়গাগুলোর মধ্যে অন্যতম সাজেক ভ্যালি। সাজেক ভ্যালিকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি সৌন্দর্য্যে ঘেরা স্থান বলা হয়। বলা হবেই না বা কেন! প্রকৃতির সকল সৌন্দর্য্য যেন এই একই জায়গায় চলে এসেছে।
বাংলাদেশের রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার অন্তর্গত সাজেক ইউনিয়নের একটি বিখ্যাত পর্যটন আকর্ষণ এটি। প্রকৃতির ছোঁয়া আর মেঘের পরশ নিতে এবং সকাল-বিকেল দৃষ্টি আকর্ষণকারী কুয়াশা উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে ছুটে আসেন প্রকৃতি প্রেমীরা। চারিপাশে উঁচু উঁচু পাহাড়ের সারি এবং সাদা তুলোর মতো মেঘের ভেলা ভেসে যায়। এই পাহাড় আর মেঘের খেলা আপনাকে মুগ্ধ করবেই। সাজেক ভ্যালির প্রকৃতি একই দিনে বিভিন্ন রূপে রূপান্তরিত হয়। কখনও খুব গরম অনুভূত হবে, তারপর হঠাৎ হালকা থেকে ঝুম বৃষ্টি, কিছুক্ষণ পরে আবার চোখের পলকেই মেঘের ঘন কুয়াশা যা আপনাকে অবাক করে দেবে।
সাজেক রুইলুই পাড়া এবং কংলাক পাড়া – এই দুটি পাড়ার সমন্বয়ে গঠিত। এখানে মূলত লুসাই, পাংখোয়া এবং ত্রিপুরা আদিবাসী বসবাস করে। রাঙামাটির অনেকটা অংশই দেখা যায় এই সাজেক ভ্যালি থেকে। সাজেক ভ্যালির অন্যতম প্রধান আকর্ষণ কংলাক পাহাড়। এই পাহাড় থেকে কর্ণফুলী নদীর উৎপত্তিস্থল ভারতের লুসাই পাহাড় দেখা যায়। সাজেক ভ্যালিতে তিনটি হেলিপ্যাড রয়েছে, যা থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করা যায়। সাজেকের রুইলুই পাড়া থেকে ট্রেকিং করে কংলাক পাহাড়ে যাওয়া যায়। কংলাকে যাওয়ার পথে মিজোরাম সীমান্তের বড় বড় পাহাড়, আদিবাসীদের জীবন-যাপন, চারিদিকে মেঘের আনাগোনা পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আপনি চাইলে রুইলুই পাড়া থেকে দু’ঘণ্টা ট্রেকিং করে কমলক ঝর্ণাও দেখে আসতে পারেন।
সাজেক রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত হলেও যাতায়াতের সুবিধার কারণে পর্যটকরা খাগড়াছড়ি জেলা দিয়েই সাজেকে যাতায়াত করেন। খাগড়াছড়ি থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। সাজেক ভ্যালি যাওয়ার জন্য প্রথমে ঢাকা থেকে বাসে খাগড়াছড়ি এসে সেখান থেকে বাস অথবা মোটরসাইকেলে করে পৌঁছাতে হবে দীঘিনালায়। দীঘিনালা থেকে জিপ বা সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে সরাসরি চলে যাওয়া যায় সাজেক ভ্যালি। এবার কথা হল সাজেক ভ্যালি বেড়াতে যাওয়ার সঠিক সময় কোনটা? সত্যি বলতে প্রতিটি মৌসুমে সাজেকের আলাদা আলাদা সৌন্দর্য্য আপনার চোখে পড়বে। শীতের সাজেক একরকম তো বর্ষায় সম্পূর্ণ অন্যরকম। তাই ভ্রমণ পিপাসুরা সারা বছর জুড়ে সাজেকে ছুটে যায়। তবে জুলাই থেকে নভেম্বর মাসে সাজেক ভ্যালির চারপাশে মেঘের খেলা দেখা যায় বেশি। তাই এই সময়টাই সাজেক ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে ভালো।
Discussion about this post