নতুন যুগের বাউল আখড়া! হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন। ঠিকানা নবপল্লী, বারাসাত। নাম ‘সহজ কুটির’। এখানেই গড়ে উঠেছে শিল্প চর্চার এক অভিনব আসর যার ব্যাপারে জানলে অবাক হতে বাধ্য আপনিও। ২০১৬ সালের মার্চ মাসে তিন শিল্পপ্রেমী যুবক প্রতীক, প্রবীর ও শুভময় গড়ে তোলেন তাদের সেই স্বপ্নের আস্তানা। কোনো ঝাঁ-চকচকে লোক দেখানো বন্দোবস্ত নয় বরং একেবারে সহজ মফঃস্বলী ঢঙে সেজে ওঠে এই আখড়া। দ্বার খুলে যায় সকল ক্ষ্যাপার জন্য। এই যাত্রার অন্যতম সদস্য নির্মাল্য জানালেন, “সহজ কুটিরের সাথে আমার সম্পর্ক প্রায় চার বছরের। এক কথায় সব কিছুকে দূরে সরিয়ে মানুষের সঙ্গে মানুষের যে মেলবন্ধন, যে আত্মিক সম্পর্ক, সেটাকেই জীবিত রাখছি মাটির গান আর সব রকম আর্ট প্রাকটিসের মধ্যে দিয়ে।”
“ক্ষ্যাপা সহজ হতে হবে তো?” দোতারা, খমক, মৃদঙ্গ থেকে শুরু করে সেতার, হারমোনিয়াম এবং গীটার পর্যন্ত সবধরনের বাজনাই এক সঙ্গে সুর তোলে এখানে। দেশ-বিদেশের সবরকম গান নতুন নিয়ম সাজায় কুটিরের অন্দরে। সঙ্গে ছবি আঁকার মাধ্যমে এক ব্যাতিক্রমী স্বাদ উপভোগ করা যায়। সময়ে-অসময়ে চেনা-অচেনা বাউল, ফকির, সাধু, গায়ক, বাদক ছাড়াও চিত্রশিল্পী, কবি, নাট্যকর্মী, আলোকচিত্রী, ছাত্র-ছাত্রীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষেরা এখন সহজ কুটিরের সহজ সঙ্গে উপস্থিত থাকেন। ঠিক এমনটাই জানালেন এই উদ্যোগের অন্যতম কান্ডারী সংসপ্তক। ছুটির দিনে এখানে আলোচনা হয় বিভিন্ন দর্শনের তত্ত্ব কথা নিয়ে। আড্ডার মাধ্যমে বিনিময় হয় বিভিন্ন অভিজ্ঞতা, আধ্যাত্মিক চেতনা তথা আবেগ-অনুভূতি। খোলাখুলি ভাবে ভাবের আদান প্রদান হলেও কাউকে কোনো ভাবে বিচার করা নিষিদ্ধ এখানে। নতুন সদস্য অরূপ এর বক্তব্য, “প্রথম প্রথম এসেই বুঝতে পারি যে হ্যাঁ, খুঁজে পেয়েছি একটা কিছু। একটা জায়গা যেখানে নিজেকে খুঁজে পেতে পারি।”
শহরের কাঠ-খোট্টা জীবনে একটি বিকল্প সংস্কৃতি গড়ার লক্ষ্যে নিজেদের বহাল করেছে এই ক্ষ্যাপারা। মৌলিক শিল্পীদের সহযোগিতা এবং শিল্প সংগ্রহশালা তৈরীর পরিকল্পনায় অটুট তারা। বিভিন্ন সময়ে ‘সহজ কুটির’ পাশে পেয়েছে শ্রদ্ধেয় খোদাবক্স ফকির, সুগত রায়, নীলাদ্রি শেখর দাস শর্মা, রক্তিমবরণ চক্রবর্তী, মৃত্তিকা বিশ্বাস, শুভব্রত সেন প্রমুখকে। এ স্বাদের ভাগ নিতে চাইলে ‘সহজ কুটির’ নামের ফেসবুক পেজের মাধ্যমে আপনারাও যোগাযোগ করতে পারেন উদ্যোক্তাদের সাথে।
প্রতিবেদনে অনুষ্কা সাহা
Discussion about this post