কলকাতা থেকে ৭৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সোমড়া বাজার। এখানেই বেহুলা ও হুগলি নদীর সংযোগস্থলে রয়েছে এক দ্বীপ। বয়ে চলা ঢেউ, দু’ধারে লম্বা গাছের সারি, নিত্যদিনের ব্যাস্ততা থেকে অনেকটা দূরে সবুজে মোড়া এই দ্বীপ। সবুজ দ্বীপ নামেই পরিচিত এটি। ঝাউ, পাম, ইউক্যালিপটাস, অর্জুন, শাল, সেগুন, মেহগনি ও দেবদারুর মহীরূহে এই দ্বীপের নাম ‘সবুজ দ্বীপ’ সার্থকতা পেয়েছে।
৯০ দশকের প্রথম দিকে বলাগড়ে গঙ্গার উপর এই দ্বীপটি জেগে ওঠে। গাছপালায় ঘেরা সবুজ এই দ্বীপকে ঘিরে বাড়তে থাকে মানুষের আগ্রহ। আগে সবুজ দ্বীপ শুধু শীতকালেই খুলে দেওয়া হত। বছরের অন্য সময় মানুষের পা পড়ত না। বলাগড়ের স্থানীয় প্রশাসন সবুজ দ্বীপকে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে চেষ্টা শুরু করেন। ধীরে ধীরে গঙ্গার উপর সবুজ দ্বীপকে একটি ইকো-ট্যুরিজিম কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা শুরু করে রাজ্য সরকার। দ্বীপ সাজানোর দায়িত্ব পায় এক বেসরকারি সংস্থা। কিন্তু কোথাও একটা সমস্যার কালো মেঘ যেন দেখা যাচ্ছে সবুজ দ্বীপের ওপর। সবুজ দ্বীপের একটি গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণ লম্বা লম্বা বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। কিন্তু গাছের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসছে সবুজ দ্বীপে। যার ফলে সেখানকার বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। যার দুটি কারণ উঠে আসছে।
প্রথমত কোন এক অজানা কারনে সবুজ দ্বীপের বেশ কিছু সংখ্যক গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় কয়েক জনের মতে নদীর একদম পাশে হওয়ায় মাটির সমস্যার কারণে এটি হতে পারে। তবে তাদের মধ্যে কিছুজন এর উপযুক্ত কারণ খুঁজে এই সমস্যা সমাধানের কথা বলছেন। দ্বিতীয়ত, সবুজ দ্বীপে গড়ে উঠছে কংক্রিটের ঘর। যার জন্য কিছু সংখ্যক গাছ হলেও কাটা যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে তার পরিবর্তে গাছ লাগানোর নিয়মাবলী কি মানা হচ্ছে বা মানা হবে পরবর্তীতে? সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
আর একটি কঠিন সমস্যা দেখা দিতে শুরু করেছে সবুজ দ্বীপে। তা হল প্লাস্টিক। বেশি সংখ্যক পর্যটকদের আনাগোনাতে যেখানে সেখানে পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে প্লাস্টিক। সবুজ দ্বীপের মাটি ও সেখানকার পশু পাখিদের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে, যা নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের পদক্ষেপ খুবই প্রয়োজন। এবার আসি আমাদের দায়িত্বে। সবুজ দ্বীপকে সুন্দর রাখতে প্রশাসনের পাশাপাশি দায়িত্ব নিতে হবে প্রতিটি পর্যটককে। তবেই ভবিষ্যতের জন্য আমরা রেখে যেতে পারব সবুজ দ্বীপ।
Discussion about this post