একটি ছোট গ্রাম আস্তে আস্তে হয়ে উঠেছে রুশ নগরী। গ্রামসহ সারা দেশের প্রচুর মানুষ পেয়েছেন কাজের খোঁজ। এই চিত্র বাংলাদেশের পাবনা জেলার, পাকশী উপজেলার রূপপুর গ্রামের। এটিকে এখন গ্রাম বলে সম্বোধন করা বোকামি বটে। তাই ‘রূপপুরকে সিটি’ বলেই সম্বোধন করা হয়।
২০১১ সালের ২ নভেম্বর রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ একটি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের। যেখানে সমস্ত ধরনের কাজ-দেখাশোনা রাশিয়া করবে আর বাংলাদেশ জমিটুকু দিয়ে প্রকল্পের কাজ তদারকির মাধ্যমে রাশিয়ার কাছ থেকে বুঝে নেবে। ১৯৬১ সালে প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা হয়। ১৯৬২ সালে পাবনা জেলার পদ্মা নদীর পাশে রূপপুরকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্থান হিসেবে নির্বাচন করা হয়। এই প্রকল্পের জন্য ২৬০ একর এবং আবাসিক এলাকার জন্য ৩২ একর জমি নির্ধারিত হয়। ১৯৬৮ সালের মধ্যে ভূমি উন্নয়ন, অফিস, রেষ্ট হাউজ, বৈদ্যুতিক উপ-কেন্দ্র ও কিছু আবাসিক ইউনিটের নির্মাণ কাজের মতো বেশ কিছু কাজও হয়ে যায়। তবে ১৯৬৯ সালে ২০০ মেগা-ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হয় না। তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের নির্দেশে সবটাই বাতিল হয়।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার আবার পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ১৯৭৭-১৯৮৬ সালে মেসার্স সোফরাটম কর্তৃক একটি সার্ভেতে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়ন যৌক্তিক বলে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। পরে ১২৫ মেগাওয়াটের একটি কেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্পও অনুমোদন করা হয়। কিন্তু সেটিও বিভিন্ন কারণে বাস্তবায়িত হয়নি। আবার ১৯৮৭ সালে জার্মানী ও সুইজারল্যান্ডের দুইটি কোম্পানি কর্তৃক প্রকল্পের কথা আবার ভাবা হয়। সেইবার ৩০০-৫০০ মেগাওয়াট পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের সুপারিশ করা হয়। অবশেষে ২০১১ সালে প্রকল্পটি আবার শুরু হয় এবং বাস্তবায়িত হয়। এই বছরেই বিদ্যুৎ কেন্দ্র তার প্রথম ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করবে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি রাশিয়ার রোসাটোম স্টেট অ্যাটমিক এনার্জি কর্পোরেশন দ্বারা নির্মিত হচ্ছে। আগামী বহু বছর বাংলাদেশে বিদ্যুতের কোনো ধরনের অসুবিধে হবে না। কখনো বিস্ফোরণ ঘটলে তা সংক্রামক হতে পারে পুরো এশিয়ার জন্য।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ২.৪ গিগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি পরিকল্পিত পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। সমস্ত কাজ যেহেতু রুশ কোম্পানির তাই আবাসিকে রুশদের সংখ্যাও কম নয়। রাশিয়ানদের ঘিরেই গড়ে উঠেছে রূপপুরের রাশিয়ান সিটি। রুশরা বদলেছে নিজেদের খাবারের ধরন, দৈনন্দিন জীবনযাপন। বাংলা ও বাঙালির সাথে মানিয়ে নিজেদের। পাবনাবাসীর জীবন হয়েছে অনেকটা উন্নত। বরাবরই পাকশী বাংলাদেশের একটি খ্যাতনামা ভ্রমণকেন্দ্র। রূপপুর এখন তার অন্যতম আকর্ষণ। উন্নত বিশ্বের মতো অত্যাধুনিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে মানুষের আকর্ষণই রূপপুরকে করে তুলেছে অন্যতম।
Discussion about this post