রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া করার পর যে ছোট্ট সাদা কাগজটায় আমরা হাত মুখ মুছে নিই সেটাকে ইংরেজিতে বলে ‘ন্যাপকিন’। খুবই সাধারণ একটা বস্তু। তাই দরকার ফুরোনোর সাথে সাথেই আমরা এটির কথা ভুলে যাই। তবে এই পৃথিবীতে এমন একটি ন্যাপকিন আছে যাকে ইতিহাসের দলিল হিসেবে সযত্নে ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখা হয়েছে। কেন? তা জানতে হলে ফিরে যেতে হবে আজ থেকে কুড়ি বছর আগে।
২০০০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গ্রোথ হরমোনের সমস্যায় ভোগা একটা ১৩ বছরের বাচ্চা ছেলে পা রাখে স্পেনের মাটিতে। তবে রোগ তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। পায়ে বল পড়া মাত্র তার সরু সরু পায়ের ম্যাজিক, ট্রায়ালে উপস্থিত থাকা সমস্ত লোককে বিস্মিত করে তোলে। তার খেলা দেখে রিয়াল মাদ্রিদ সর্বশক্তি নিয়ে নেমে পড়ে এই বিস্ময় বালকের সাথে চুক্তি সই করার জন্য। ইতিমধ্যে কেটে যায় দু’মাস। তখন আসরে নামেন বার্সেলোনার তৎকালীন ক্রীড়া পরিচালক কার্লোস রেক্সাচ। বুঝতে পারেন এই প্রতিভাকে কিছুতেই হাতছাড়া করা যাবে না। তাই ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর স্পেনে থাকা ওই বিস্ময় বালকের এজেন্ট হোরাসিও গ্যাগিওলিকে লাঞ্চে ডেকে, তৎক্ষণাৎ একটা ন্যাপকিনের মধ্যে পেন দিয়ে চুক্তির সমস্ত বয়ান লিখে, বাকি অফিসিয়ালদের সামনেই তিনি চুক্তিবদ্ধ করিয়ে নেন সেই বালককে। একটা রেস্টুরেন্টের ন্যাপকিনে লেখা হয় ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম মহামূল্যবান চুক্তিপত্র।
আজ সেই ১৩ বছরের বিস্ময় বালকের ৩৩ তম জন্মদিন। আজ জন্মদিন এমন এক অপ্রতিরোধ্য যোদ্ধার যে ব্যর্থতার ছাই থেকে বারংবার ফিনিক্স পাখির মতো ডানা মেলে উঠে আসতে জানে। তার জীবনযাপন আদতে এই সাদা ন্যাপকিনটার মতোই সাধারণ। কিন্তু তার জীবনের গুরুত্ব ফুটবলের ইতিহাসের সবচেয়ে মহামূল্যবান এই চুক্তিপত্রের মতোই অপরিসীম। শুভ জন্মদিন লিওনেল মেসি। মাঠে থাকুন, ম্যাজিকে থাকুন!
কলমে অভীক রায়
Discussion about this post