করোনা ভাইরাসের মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞদের কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ। চলছে প্রতিষেধক তৈরির প্রচেষ্টা। নির্দেশ মেনে প্রায় সারা বিশ্বও এখন কোয়ারেন্টাইনে বন্দী। তবুও করোনার সংক্রমণ দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। ভাইরাসের কবল থেকে মুক্তি পায়নি দক্ষিণ আমেরিকার ছোট্ট দেশ ইকুয়েডরও। ইতিমধ্যেই এদেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় এক হাজার পেরিয়ে গিয়েছে। প্রায় তিরিশ জনের মৃত্যু ঘটেছে। করোনা প্রতিরোধে দেশটির সীমান্ত সিল করে দেওয়া হয়েছে। জারি হয়েছে লকডাউনও। তবুও ইকুয়েডরের বাসিন্দা কিছু আদিবাসী মানুষজন আশ্বস্ত হতে পারছেন না কিছুতেই। তাদের দলপতিদের কথা মেনে শহর ছেড়ে তারা ফিরে যাচ্ছেন আমাজনের গভীর অরণ্যের দিকে, তাঁদের আদি বাসস্থানে।
ইকুয়েডরের আমাজন জঙ্গলে প্রায় ১১টি আদিবাসী সম্প্রদায়ের বসবাস। বিভিন্ন আধুনিক পেশাতে যুক্ত হয়ে দিন কাটছিল তাদের। কিন্তু করোনার প্রভাব ইকুয়েডরে পড়া মাত্রই আর ভরসা পাননি তারা। লকডাউনের ফলে যদিও পরিবহণ ব্যবস্থা বন্ধ। কিন্তু তাও দমিয়ে রাখা যায়নি তাদের। আধুনিকতার বিষাক্ত আবহাওয়া থেকে বাঁচতে তারা জঙ্গলেই ফিরে যেতে চাইছেন। কয়েক দিন জঙ্গলে কাটানোর পর শহরের অবস্থার উন্নতি ঘটলে আবার ফিরবেন তারা। এমনকি এই ক’দিন কোনও বহিরাগতের প্রবেশও নিষিদ্ধ সেখানে।
আদিবাসীদের জঙ্গলে ফিরে যাওয়ার এই সিদ্ধান্তে যদিও একেবারেই হতাশ ইকুয়েডরের প্রশাসন। প্রশাসনিক কিছু কর্তাদের মতে, শহরে বহুকাল কাটিয়েও আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি তাদের গায়ে। তারা এখনও নাকি কুসংস্কারে বিশ্বাসী। বিজ্ঞান বা স্বাস্থ্য বিধি কিছুই তারা মানেন না। পৃথিবী জুড়ে যখন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তখন তারা জঙ্গলে একসঙ্গে গাদাগাদি করে কাটাতে চান। এতে ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কাও বেড়ে যাবে বহু গুণে। যদিও কর্মকর্তাদের একথা মানতে নারাজ ইকুয়েডিয়ান আদিবাসীদের দলপতি। তাদের এক সদস্যা শ্রীমতী নেমেন্তো নেনকুউমোর দাবী, গোটা সভ্যতাই এখন একটি মূর্তিমান ভাইরাস। এই ভাইরাস থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় প্রকৃতির কাছে আশ্রয় নেওয়া। অতিরিক্ত আধুনিকতাই বিভিন্ন রোগের জন্ম দিচ্ছে। প্রকৃতি বাঁচাতে তাই তারা নিজেরাই এগিয়ে এসেছেন। নিজেদের আদি বাসস্থানে ফিরতে পেরে তারা আজ সত্যিই আপ্লুত।
Discussion about this post