উত্তরাখণ্ডের সোলোয়া গ্রাম, মিডিয়ার দেয়া নাম ‘Most Haunted Village of Uttarakhand’. সত্যি রাতে সে গ্রামের আদিবাসীরা পালিয়ে যায় আরও ওপর পাহাড়ে ! নিজের ঘর ছেড়ে কেউ যায় এমন? বেশ কয়েক পরিত্যক্ত কুঠি ঘুরে দেখেছি – দোতলা টং ঘর, নিচে শিকল আঁটা গোশালা, অনাথ গরু ভেড়া এখনো আছে। এই শূন্যপুরীতে ভৌতিক কেঁদে ওঠে সালোয়া প্রতি নিশিতে। তখন টর্চের আলোয় নীল স্থির আখের ক্ষেত, বিবর্ণ পাইন বন সাদা হিম, সমুদ্রনীল মাকড়সার জাল দুলতে ভয় পায় প্রেত শীৎকারে! শোনা যায় ১৯৫২ সালে ভারতীয় সেনার এক ট্রাক সালোয়ার খাদে পড়ে যায় নিহত হন আহত আটজন সেনা। প্রচার হয় স্থানীয় গ্রামবাসী ঐ বিপদে নাকি সহায় না হয়ে উদ্ধারের বদলে লুটপাট করে সেনা সম্পদ! যা একদম মিথ্যে, পাহাড়ি মানুষেরা ভীষণ দয়ালু সরল। কিন্তু মিথ্যেটাই মিথ হয়ে যায়, প্রমাণের অভাবে জনশ্রুতি। সেই অপঘাতে মৃত জওয়ানের আত্মাই টহল দেয় সারারাত, ‘জাগতে রহ’ ধাক্কা খায় পাহাড়ের গায়।
এইসব শুনে হানা দিয়ে ছিলাম সেই ভূতগাঁওতে। অবাক মাত্র নয়টি ঘর নিয়ে একটি গ্রাম সালোয়া! টনকপুর থেকে ভূতগাঁওতে ঢোকার মুখেই নবদুর্গা মন্দিরে শহীদ স্মারক বেরিলির সেই আট শহীদের নাম লেখা লালবেদি। ভূপাল সিং, জগৎ সিং, মান নইন বীর রুদ্র পুরুষোত্তম ও বতেবা – গান স্যালুট আপনাদের। পূজারীর কথায় প্রায় চল্লিশ বছর আগে এক ইংরেজ সাহেব ঘাঁটি গড়ে এখানে ,পরে উড়ে যায় ভুতের ভয়ে আমি পালালাম – তার উক্তি সেই কথা থেকে গুজব। এখানে সবাই মেষপালক, ক্ষেতের পানিফলের আটা কুট্টু, গোড়ালেবু রডোডেনড্রন জুস, লেবু জল বিক্রী করে দিন গুজরাণ করে হতদরিদ্ররা কোনো ঘর সিমেন্টের গাঁথনি ছাড়াই আলগা পাথর মাটি গাছের গুড়ি জুড়ে তৈরী চমৎকার থাকে। এমনই এক ডেরায় রাতে থেকে গেলাম গ্রামের নাগনী আম্মার বাড়ি। সে বুড়ি ‘কভি কিসিসে ডরতি নহি’। জানায় এ তুষারশৃঙ্গের কাছের গ্রাম হলেও দিনে প্রচন্ড গরম রাতে কনকনে!
বিদ্যৎ তো নেই অঞ্চলে কোনো কালে ,একটা পোল পুঁতে হাজার মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে কেটে পড়েছে দপ্তর। ২০২২ এও এমন আঁধারকার্ড! এমনকি আজও কোনো পাকা সড়ক নেই, হাসপাতাল তো দুরস্ত! মাইলের পর মাইল শতাব্দী প্রাচীন অন্ধকারে লণ্ঠন নিভিয়ে হাড়হিম অপেক্ষা শুরু হল। ছাদে বরফ পড়ছে, লুজ পাথরের সিঁড়িতে মাঝরাত ۔۔ তুষারপাতে আমরা দুই মূর্তি ভ্যানিলা আইসক্রিম ভুত, হঠাৎ ভুতুম প্যাঁচার ডাক ! ডানা ঝটপট করে ঐ কারা যেন দৌড়োচ্ছে ,কে কেঁদে উঠলো কে ওখানে -নিশাচরের পিছনে ছুটতে লাগলাম ওঃ ! একটা সাইকেল পড়ে আছে আলে -মিশমিশে কালো অন্ধকারে হ্যান্ডেলের একটা আলো রিফ্লেক্ট করে দশটা হয়ে যাচ্ছে। আম্মা চিৎকার করে সাবধান করলো আর না পিছিয়ে যাও সামনে বিপদ খাদ -পিছোয় কে? ওই যে সাইকেলে বাঁধা সাদা কাপড় লুটিয়ে চলে গেছে গহীন খাদের দিকে সে সুতোপথ গুটিয়ে পিছু পিছু পৌঁছে গেলাম খাদে নিখাদে, তাজ্জব!
বরফে সাদা কলাপাতা ঘোমটা টানা বউপেত্নী দুলছে – হিমালয় থেকে আসা উত্তুরে বরফমাখা তুফান সজোরে আছড়ে আছড়ে পড়ছে পাহাড়ের গায়ে। প্রতিফলিত সেই শব্দ কান্না হয়ে ঝরছে কানে, ওঃ! কই কোনো প্রেত নেই তো , আরো তিনদিন থেকে গেলাম নাগনি বুড়ির কাছে। নাঃ ভূত হতাশ করলো না, তারা এলো রাত তিনটেয় বাইকে মুভি ক্যামেরা, টর্চ সহযোগে। খাদে টেপরেকর্ডার সেট করে, হায়নার কান্না ছিটিয়ে দিলো আবহে। নিঝুম জনশূন্য গ্রাম মুহূর্তে ভৌতিক ভিএফএক্সে! হাতে নাতে ধরা পড়লো দু’ তিনজন ইউটিউবার ۔۔ বাকিরা? সে রহস্য আজ থাক বরং!
Discussion about this post