অত্যন্ত আনন্দের উৎসব রথযাত্রা। কারণ শুধুমাত্র এই উৎসবে ভগবান স্বয়ং রাজপথে আসেন ভক্তদের দর্শন দেওয়ার জন্য। এর জন্য কোনও মন্দিরে যাওয়ার দরকার পড়ে না। প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম পূর্ণিমাতেই জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রার আয়োজন করা হয়। গর্ভগৃহ থেকে মূর্তি তুলে এনে স্নান মণ্ডপে তা স্থাপন করা হয়। সেখানেই সুগন্ধি জল দিয়ে স্নান করানো হয় জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে। স্নানের সঙ্গে সঙ্গে চলে মূর্তির সাজসজ্জা। স্নানের পরই জ্বরে কাবু হয়ে পড়েন জগন্নাথদেব। তাই এইসময় গৃহবন্দি অবস্থায় থাকেন তিনি। রথ পর্যন্ত বিশ্রাম নেন। তাই সেই সময়টা ভক্তরা জগন্নাথ দেবের দর্শন পান না। এমনকী, এই কয়েকটা দিন তাঁর পুজোও হয় না। আর জ্বর থেকে উঠেই রথে চেপে মাসির বাড়িতে রওনা দেন তিনি। কিন্তু এই রীতির কিছুটা ভিন্নতা দেখা যায় হাওড়ার বাঁদুরি পরিবারের রথযাত্রায়।
জগন্নাথ রথের দিনেও মাসির বাড়ি যায় না। পরিবারের ৬০০ বছরের রীতি এভাবেই চলে আসছে। বাঁদুরি পরিবারে জগন্নাথ দেব রথের দিন বিকেলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে মেলা ঘুরে আবার নিজের বাড়ি ফিরে আসে। পরিবারের প্রথম পুরুষ সূর্য কুমার বাঁদুরি এই রথযাত্রার প্রচলন করেন। রথের দিন জগন্নাথ যাই হয়ে যাক না কেন তিনি মাসির বাড়ি যাবেনই যাবেন। পৃথিবী উল্টে গেলেও তাঁর মাসির বাড়ি যাত্রা আটকায়, এমন ক্ষমতা কারোর নেই। কিন্তু এই ক্ষমতা আছে একমাত্র হাওড়ার বাঁদুরি পরিবারের। রথের দিন তাঁদের জগন্নাথ দেব মাসির বাড়ি যান না। পরিবারের ৬০০ বছরের রীতি বাঁদুরি পরিবারে জগন্নাথ দেব, বিকালে মেলা ঘুরে এসে আবার বসে পড়েন আপন বাড়িতেই। জগন্নাথের পথেই চলেন বলরাম-সুভদ্রাও। তাঁরাও ওনার সঙ্গেই জিলিপি পাঁপড় খেয়ে এসে বসে যান হাওড়া কদমতলার মাকড়দহ রোডের বাঁদুরিদের বাড়িতেই।
পরিবারের কথায়, “হাওড় কথা থেকেই হাওড়া কথার উৎপত্তি। আর এই হাওড় কথার অর্থ হল জলাজঙ্গল পূর্ণ নিচু এলাকা। অত বছর আগেও হাওড়ার জলাজঙ্গলে ভর্তি অঞ্চলেই আমাদের রথ যাত্রার শুরু।” তখন থেকে এখনও পর্যন্ত একই স্থানে আমাদের এই রথযাত্রা পালন হয়ে আসছে বলে জানিয়েছেন কল্লোল বাঁদুরি। কিন্তু রথযাত্রাকেই পরিবারের উৎসব হিসাবে বেছে নেওয়ার কারন কী? যত দূর জানা সেই সময় ওই অঞ্চলে বিশেষ কোনও আমোদ প্রমোদের ব্যবস্থা ছিল না। পরিবারের সদস্য ও এলাকার মানুষের আমোদ প্রমোদের জন্যই এই রথযাত্রার শুরু। খোলা রাস্তায় জগন্নাথকে নিয়ে মাসির বাড়ি যাত্রায় জাতি ধর্ম নির্বিশেষে অসংখ্য মানুষের অংশগ্রহণ চলে আসছে মধ্যযুগ থেকে। বাঁদুরি পরিবারের জগন্নাথ দেবের কোনও মাসির বাড়ি নেই। একটাই ঘর একটাই বাড়ি। বাঁদুরিদের রথ বেরোলেই দূর থেকে যেন ভেসে আসে সেই অনাবিল ছন্দ।
প্রচ্ছদ চিত্র ঋণ – জিয়ো বাংলা
Discussion about this post