আজকাল আমরা বাঙালিরা কথায় কথায় বলি পাহাড়ের কোনো এক অফবিট জায়গায় গিয়ে দু-তিন দিনের ছুটি কাটিয়ে আসবো। আর কলকাতা বা এর আসে পাশে বলতে আমাদের একমাত্র সম্বল উত্তরবঙ্গ অথবা সিকিম। আর এখানে আমরা ইদানিং বেশ কিছু বছর হল স্যোশাল মিডিয়া এবং ইউটিউব এর দৌলতে বেশ অনেক অফবিট জায়গার সন্ধান পেয়েছি বা আগামীদিনে আরও পেতে চলেছি। আর এই অফবিট পর্যটনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অনেক হোম স্টে এসব জায়গায়।
এখন আসা যাক এই হোম স্টে আসলে কি? এটি হলো কোনো এক স্থানীয় লোকের বাড়ি যা শহর থেকে বেশ দূরে কোনো এক দুর্গম গ্ৰামে, নদীর পাড়ে, পাহাড়ের ঢালে বা কোনো উপত্যকায়। যেখানে মানুষকে তার দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহৃত জিনিসপত্র কিনতে গেলেও তাকে ১-২ ঘন্টার রাস্তা অতিক্রম করতে হয়। সেখানে চিকিৎসা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সমস্ত আধুনিক জীবন তাদের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। আর আজকাল এই অফবিট পর্যটনের জন্য পর্যটকরা সেই সমস্ত স্থানীয় লোকের বাড়িতে গিয়ে থাকেন তাদের পরিবারের সাথে। যার মূল উদ্দেশ্য হল স্থানীয় এলাকা সম্পর্কে জানা, তাদের ভাষা, খাওয়াদাওয়া, জীবনধারা এ সমস্ত কিছু জানা আর সেখানের প্রকৃতির সৌন্দর্য্য উপভোগ করা। আর তার বিনিময়ে তাদের থাকা-খাওয়ার খরচটা তাদেরকে দেওয়া।
প্রসঙ্গত বলে রাখি আমি সিকিমের এক হোম স্টের সাথে বেশ কিছুদিন হল কাজ করছি। এছাড়াও আমি ট্যুরিজম অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নিয়েও পড়াশোনা করছি। তো এই পর্যটন নিয়ে কিছু কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। আর নিজেও প্রচুর ঘুরে বেড়াই এইসব অফবিট সহ বিভিন্ন জায়গায়। আর এই অফবিট পর্যটনে প্রচুর বাঙালি আসেন। বলতে পারেন আমি যে হোম স্টের সাথে যুক্ত সেখানে ৮০% বাঙালি পর্যটক যান। সেখানে গিয়ে তারা বিভিন্ন ধরনের পরিষেবা চান যেগুলো হোম স্টে কালচারের মধ্যে পড়ে না। তারা শহরের হোটেলের মতো রোজ রুম সার্ভিস চান, পাওয়ার ব্যাক-আপ চান, ওয়াইফাই, কফি, স্যান্ডউইচ থেকে শুরু করে সমস্ত রকমের আধুনিক প্রযুক্তি ও পরিষেবা চান।
এসব ভেবেই অনেক আধুনিকীকরণ ঘটেছে এই হোম স্টেগুলোতে। কিন্তু ভেবে দেখুন তো শুরুটা হয়েছিল ওদের জীবন যাপন কেমন সেটা জানার জন্য, ওদের সংস্কৃতি-খাওয়াদাওয়া কেমন সেটা জানার জন্য। এই অতিরিক্ত আধুনিকীকরণের জন্য আমরা নির্ভেজাল হোম স্টে সংস্কৃতি হারিয়ে ফেলছি। আমাদের মধ্যে বেড়াতে গিয়ে কোথাও না কোথাও মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা তো বেড়াতে যাই ক’টা দিন শহরে থেকে দূরে প্রকৃতির কোলে একটু শান্তির নিশ্বাস নিতে। কিন্তু সেখানেও গিয়ে যদি সেখানের মানুষের সাথে আমরা ঝগড়া ঝামেলা করে কাটাই তাহলে তো যাওয়াটাই বৃথা। আর এর ফলে পাহাড়ের মানুষদের বাঙালিদের প্রতি বিদ্বেষের সৃষ্টি হচ্ছে। আমার মনে হয় এই ক’দিন একটু ওদের জীবনশৈলীর সাথে নিজেদের মিশিয়ে দিয়ে দেখুন না! বেশ ভালোই লাগবে আর সাথে একটা সুসম্পর্কও তৈরী হবে।
প্রতিবেদন – বন্যা
Discussion about this post