শাল শিমুল পলাশের দেশ মানেই পুরুলিয়া। পাহাড় ও সবুজে ঘেরা পুরুলিয়া যেন একেবারে স্বপ্নের জগৎ। শীত হোক বা বর্ষা– ঋতুর বৈচিত্র্যের সাথে সাথে এখানকার পরিবেশের মনমাতানো সাজের টানে ভিড় জমান পর্যটকরা। আর ঋতুটা যদি হয় বর্ষা, তাহলে সেকথা আর নাই বা বললাম! শহুরে কোলাহল, ধুলো-ধোঁয়া এড়িয়ে মায়াবী পরিবেশে দিন কয়েক কাটানোর জায়গা হিসেবে পুরুলিয়া কিছু কম যায় না। দু’চোখ ভরে দেখার মতো বেশ পরিচিত জায়গাগুলোর মধ্যে অযোধ্যা পাহাড়, বরন্তি জলাধার, জয়চণ্ডী পাহাড় এসব তো আছেই। তবে পুরুলিয়ায় লোকচক্ষুর আড়ালে ধীরে ধীরে সৌন্দর্য্যে মোড়া আরেক পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠছে, যার নাম রঞ্জনডি জলাধার। পুরুলিয়া শহর থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে কাশীপুর রাজবাড়ির খুব কাছেই অবস্থিত দারুণ এক জায়গা।

জায়গাটির মূল আকর্ষণ হল বিস্তীর্ণ জলরাশির ধারে ঘন সবুজ অরণ্য। আর এই ঘন অরণ্যই পর্যটকদের কাছে পুরুলিয়ার সুন্দরবন। অনেকের কাছেই এই জলাধার যোগমায়া সরোবর নামে পরিচিত। সুন্দরবন বলতেই অনেকের মনে আসতে পারে সুপরিচিত ম্যানগ্রোভ অরণ্য, রয়েল বেঙ্গল টাইগারের কথা। তবে না, পলাশের দেশে নেই কোনো ম্যানগ্রোভ গাছ, আর না কোনো বাঘের অস্তিত্ব। বরং এই জলাধারের পাড়ে পাবেন সোনাঝুরির জঙ্গল। আছে কম খরচে নৌকা বিহারের সুবিধা। জন প্রতি মাত্র ৩০ টাকা। জল-জঙ্গল এবং তার মধ্যে নৌকা চড়া– এ সব কিছু মিলিয়ে এ যেন এক অন্য সুন্দরবন।

আগামী দিনে পর্যটকদের আকর্ষণ কাড়তে এখানে একটি পার্ক তৈরির পরিকল্পনাও চলছে। আপাতত বিশেষ ভিড় না হলেও শীত এবং বসন্তে রঞ্জনডি জলাধারের পাড়ে পর্যটকদের সমাগম দেখা যায়। শীতে উপরি পাওনা হল পরিযায়ী পাখির কিচির-মিচির। চারিদিকে ছোটো ছোটো টিলা, শাল – সোনাঝুরির সবুজ জঙ্গল, পাখিদের ডাক এবং সরোবরের কলধ্বনি– এসবের সাক্ষী থাকা সত্যিই এক আলাদা অনুভূতি।

বিগত প্রায় পাঁচ বছর ধরে এই জলাধারকে কেন্দ্র করে এখানে সাজানো-গোছানোর কাজ চলছে। থাকার জন্য কটেজ, অতিথিশালার পরিষেবা ছাড়াও পঞ্চায়েত সমিতির লজ রয়েছে। ভাড়া- ১২০০/১৪০০ টাকা, সাথে খাবার ব্যবস্থাও রয়েছে। সুতরাং, রাত কাটানোয় কোনও অসুবিধা এই অঞ্চলে নেই। যাতায়াতের পথও খুব একটা মুশকিলের নয়। ট্রেনে গেলে নামতে হবে পুরুলিয়া কিংবা আদ্রা। সেখান থেকে গাড়িতে সোজা কাশীপুর। কাশীপুর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটারের রাস্তা। দ্বারকেশ্বর নদী পেরিয়ে ধটলা মোড় থেকে ডান দিকে আর ১ কিলোমিটার গেলেই পৌঁছে যাবেন পুরুলিয়ার সুন্দরবনে।
Discussion about this post