ঢাকের বাদ্যি, কাশের দোলায় পুজো এসে চলেও গেল। সাবেকিয়ানায় সেজে উঠেছিল বিভিন্ন প্রান্তের নানান বনেদি বাড়ি। তেমনই এবার প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের পুজো রানাঘাটে দে চৌধুরী বাড়ির। এ বাড়িতে ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, নিয়ম মিলে মিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল। এ বাড়ির পুজো শুরু হয় ১৭৪৪ সালে। রামসুখ দে ছিলেন এই পুজোর প্রবক্তা। সুবা বাংলার অধিবাসী রামসুখ দে ব্যবসার তাগিদে চলে আসেন নদিয়াতে। অবশেষে চুর্ণী নদীর ধারে জমিতে নির্মাণ করান বর্তমানের দে চৌধুরী বাড়ি। শোনা যায়, তাঁর ব্যবসার উন্নতি দেখে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাঁকে এই চৌধুরী উপাধি দেয়। এ বছর পুজোটি ২৭৯ বছর পূর্ন করল। রামসুখ দে সমস্ত উপাচার মেনে শুরু করেছিলেন এই পুজো। পুজোর সময়ে দরিদ্রদের দান করা ছিল তার অন্যতম উদারতা।
এ বাড়ির সনাতন রীতিটি বেশ সুন্দর। মহালয়ার পরদিন প্রতিপদ থেকেই মূলত শুরু হয় এই পুজো। সেদিন থেকে পর পর নয় দিন ধরে হোম যজ্ঞে ১০০৮ টি বেল পাতা আহুতি দেওয়া হয়। দুর্গা পুজোর পাশাপাশি চলে শ্রীধর জিউয়ের নিত্য পুজোও। গোটা বাড়ি সেজে ওঠে আলোতে। এ আলো আনন্দের। সারা বছর বাড়ির বাইরে থাকলেও পুজোয় বাড়ির সদস্যরা জমায়েত হন বাড়িতেই। এ আবেগকে না বলা যায় না।
ষষ্ঠীর বোধনের পর তিনদিন টান টান উৎসবের রেশ কাটলে এসে যায় দশমী। বিসর্জনের বাজনা বাজলেই প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয় শ্যামবাবুর ঘাটে। বাড়ির মহিলারা মেতে ওঠে সিঁদুর খেলায়। তারপর বাড়ি ফিরে শ্রীধর জিউকে প্রণাম করে শুরু হয় বিজয়া পর্ব। আপাতত পরের পুজোর অপেক্ষায় ফের দিন গোনা শুরু। আপনি চাইলে আগামী পুজোয় চলে আসতেই পারেন রানাঘাটের দে চৌধুরী বাড়ির। রানাঘাট স্টেশন থেকে টোটো ধরে একেবারে সোজা দে চৌধুরী বাড়ি। আনন্দে ভরপুর মেজাজ আরও ভালো হয়ে উঠবে।
Discussion about this post