ভ্রমণপ্রিয় বাঙালির পায়ের তলায় সর্ষে। পাহাড় থেকে সমতল, জঙ্গল থেকে সমুদ্র, ভ্রমণ তালিকায় বাদ নেই কোনোটাই। আর পাহাড়, সমুদ্র, জঙ্গল তিনটেই যদি একসঙ্গে পাওয়া যায় তাহলে তো সোনায় সোহাগা! যদিও সেগুলি একসাথে পেতে গেলে তো সেই সুদূর দক্ষিণ। কিন্তু না! আপনার ঘরের প্রায় কাছেই রয়েছে এমন এক জায়গা, যার নাম রম্ভা। উড়িষ্যার ভুবনেশ্বরের খুব কাছেই অবস্থিত মনোরম জায়গাটি।
বাঙালির চিরাচরিত সমুদ্র সৈকত বলতে যেগুলোর নাম প্রথমেই মনে আসে রম্ভা তার মধ্যে কখনোই পড়ে না। সত্যি বলতে রম্ভাকে চিরাচরিত সৈকতগুলোর মতো দেখতেও নয়। তবে কিছু ম্যাগাজিন অনুযায়ী এই জায়গা নাকি একটি ছোট্ট উপকূলীয় স্বর্গ। ভৌগোলিকভাবে এটি একটি হ্রদ যাকে পূর্বঘাট পর্বতমালা এক নিবিড় অন্তরঙ্গতায় জড়িয়ে রেখেছে।
ভুবনেশ্বর রম্ভা মোটামুটি ঘন্টা তিনেকের পথ। রম্ভা যাওয়ার রাস্তা পূর্বঘাটের মধ্য দিয়ে। তাই যাওয়ার পথে অসম্ভব সুন্দর কিছু দৃশ্য মুহূর্তের জন্যও হতাশ করবে না। চিল্কার হ্রদেরই এক নান্দনিক অংশ হল রম্ভা। সামুদ্রিক পাখির প্রতি টান থাকলে রম্ভা এক আদর্শ জায়গা। সেখানেই একটু মনোরম হাওয়ায় জিরিয়ে নিতে ইচ্ছে হলে প্রচুর নৌকোর দেখাও মিলবে। প্রধানতঃ তিনটি জায়গা প্রায় ২ ঘন্টা ধরে ঘুরে দেখা যাবে নৌকোভ্রমণে।
১. ব্রেকফাস্ট আইল্যান্ড :- এটি পাশ্চাত্য ধাঁচের এক কক্ষ বিশিষ্ট বাড়ি যেটি একা সমুদ্রের মাঝে দাঁড়িয়ে। চারিদিকে যতদূর চোখ যায় চারপাশে শুধু রম্ভার জল। আকাশে জুড়ে উড়ে যায় কিছু পরিযায়ী পাখি। একইসঙ্গে বেশ রোমান্টিক ও রোমাঞ্চকর এই ব্রেকফাস্ট আইল্যান্ড। তবে এটি ঠিক কবে আর কার তৈরী তা সঠিকভাবে জানার উপায় নেই। তবে পাশ্চাত্য গঠন দেখে বলা যায় ইংরেজ আমলে জাহাজের উপর নজর রাখতেই হয়তো এটির জন্ম।
২. গুহাঃ- সমুদ্রবক্ষে রয়েছে একটি পাহাড় আর তাতে একটি গুহায় বিরাজ করছেন মহাদেব এবং ধর্মরাজ। তবে এখানে একটি কথা বলে রাখি। শারীরিক ভাবে সচল হলে তবেই ওই গুহায় যাবার চেষ্টা করা উচিৎ। গুহার প্রবেশদ্বার সংকীর্ণ। ছোট্ট দ্বীপটির আদি বাসিন্দারাই গুহার পরিচর্যা করেন।
৩. বার্ড আইল্যান্ড :- গুহা ছেড়ে নৌকো কিছু দূর এগোলেই এক প্রকান্ড ডাইনোসরের মাথা নজরে পড়ে। ছোটবেলায় দেখা জুরাসিক পার্ক সিনেমার মধ্যে ঢুকে পড়েছি বলে মনে হতেই পারে। উপকূল থেকে কিছু দূরের এই দ্বীপে ডাইনোসরের স্ট্যাচু ছাড়াও আছে নানা ধরণের পাখি আর রোমাঞ্চ। পছন্দ হলে পাহাড়ে খানিক ট্রেকিংও করাও যেতে পারে। এরপর ফেরার পথে বেলা শেষে চোখে পড়বে কিছু মানুষের বুক পর্যন্ত জলে দাঁড়িয়ে মাছ ধরা। স্বচ্ছ জলে চোখ রাখলে জলের নিচের মাছ ও গাছ ও দেখা যাবে। পাহাড়ের গায়ে তখনও কিছু ছেলে একপাল ভেড়া এবং ছাগল চড়াচ্ছে।
এখানের পাহাড়ের কোলে সূর্যাস্ত দেখা কিন্তু মিস করলে চলবে না। সূর্য ডোবার আগে রম্ভার জল যেন গলানো সোনা, ঝলমল করে ওঠে চারিদিক। তারপর ধীরে ধীরে পাহাড়ের কোলে হাজার হাজার পাখির কলকলানির মধ্যে দিয়েই সন্ধ্যা নেমে আসে রম্ভায়।
রম্ভার এই নির্জনতা আর নির্মল হাওয়া শরীরের সব ক্লান্তি এবং গ্লানি ধুয়ে মুছে সাফ করে দেয়। তাই এই বসন্তে সুন্দরী রম্ভা যেন আপনারই অপেক্ষায়। সুযোগ পেলে ঘুরে আসা যেতেই পারে।
পথনির্দেশ : হাওড়া থেকে ভুবনেশ্বরগামী যে কোনো ট্রেন ধরে প্রথমে ভুবনেশ্বর। সেখান থেকে বাস বা প্রাইভেট গাড়ি করে নিলে অনায়াসেই পৌঁছে যাওয়া যায় রম্ভাতে। রাস্তা জুড়ে অসংখ্য খাওয়ার দোকান রয়েছে যারা ভাত-রুটি অর্ডারে বানিয়ে দেয়। থাকার জন্য ভুবনেশ্বর বা রম্ভাতে সব রকম বাজেটের মধ্যেই বহু হোটেল আছে।
Discussion about this post