সে অনেককাল আগের কথা। একটা সময় ছিল যখন তদানীন্তন কলকাতার রাতের ঘুম উড়তো রঘু ডাকাতের ডাকাতির গর্জনে। সে সময় ছিল নরবলির প্রচলন। মা কালীকে সন্তুষ্ট করার জন্য ডাকাতেরা নরবলি দিত। এমনকি শোনা যায় নরবলি দিয়ে ও ল্যাঠা মাছ পোড়া দেবী কে উৎসর্গ করে তবেই নাকি ডাকাতি করতে বের হতো এই রঘু ডাকাতের দল। সেই ডাকাত কালীর ইতিহাসের সাক্ষী বহন করে আজও হুগলীর বাসুদেবপুরে রয়েছে রঘু ডাকাতের কালী মন্দির।
এই মন্দিরকে কেন্দ্র করে রয়েছে নানান গল্প। শোনা যায় একবার নাকি কালী উপাসক সাধক রামপ্রসাদ এই রঘু ডাকাতের খপ্পরে পড়েন। আর তখনই এই রঘু ডাকাতের সাকরেদ ও দলবল রামপ্রসাদকে নরবলি দেওয়ার জন্য ধরে নিয়ে যায়। এই ঘটনায় রামপ্রসাদ পড়লেন ঘোরতর বিপদে। অবশেষে একসময় জীবনের শেষ ইচ্ছা স্বরূপ তিনি রঘু ডাকাতের কাছে প্রার্থনা করলেন একটি ইচ্ছা।
হাড়িকাঠে গলা দেবার আগে রঘু ডাকাতের কাছে মা কালীকে গান শোনানোর আর্জি জানালেন তিনি। সে আর্জি মঞ্জুর হয়। রামপ্রসাদের গান শুনে একপ্রকার মোহিত হয়ে পড়েন রঘু ডাকাত। এমন সময় হঠাৎই রঘু ডাকাতের চোখের সামনে হাড়িকাঠে ভেসে ওঠে রামপ্রসাদের বদলে মা কালীর মুখ। এ ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে যায় রঘু। তক্ষুনি বলি বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে রামপ্রসাদের সেবার ব্যবস্থা করেন তিনি এবং পরদিন রামপ্রসাদকে বাড়ি পৌঁছে দেন।
প্রাচীন গন্ধ মাখানো এমন নানান গল্প ছড়িয়ে রয়েছে এই মন্দির ঘিরে। আজও প্রথা মেনে ল্যাটা মাছ পোড়া উৎসর্গ করা হয় দেবীকে। আর সেই ভোগ পেতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে মানুষ। আর এভাবেই স্বমহিমায় আজও বছরের পর বছর আরাধনা করা হয় এই ডাকাত কালীকে শক্তির প্রতীক রূপে।
চিত্র ঋণ – সুমঙ্গল সাহা
Discussion about this post