দিনের শুরুতে হালকা রোদ মনে করিয়ে দেয় ‘আজি এ প্রভাতের রবির কর…।’ রবির কর রোজই হয়তো আসে, কিন্তু রবীন্দ্রনাথ নিজে? বাংলাদেশের কোন কোন জায়গায় গিয়েছিলেন তিনি! কবিগুরুর পায়ের ছাপ পড়েছিল ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী আলেকজান্ডার ক্যাসেলে। চারিদিকে গাছে ঘেরা বিশাল এক প্রাসাদ। ময়মনসিংহের একেবারে কেন্দ্রে অবস্থিত এই ক্যাসেলটি। তবুও এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করে সকলকে।
বিখ্যাত এই আলেকজান্ডার ক্যাসেল নির্মিত হয়েছিল প্রায় ২৭ একর জমির উপর। মুক্তাগাছার জমিদার মহারাজ সূর্যকান্ত আচার্য ১৮৭৯ সালে নির্মাণ করেন এই বিশাল ভবন। শশী লজে ছিল সূর্যকান্ত আচার্যের বাগান বাড়ি। সেখানেই রয়েছে বর্তমানের এই ক্যাসেল। এর নামকরণ নিয়ে দু রকমের কথা শোনা যায়। কেউ বলেন, ব্রিটিশ শাসক সপ্তম এডওয়ার্ড ও তার স্ত্রী আলেকজান্দ্রার নামানুসারে এ জায়গার নামকরণ। আবার কেউ বলেন, তৎকালীন কালেক্টর এন. এস. আলেকজান্দ্রার নামানুসারে এর নাম আলেকজান্ডার ক্যাসেল।
সে সময়ে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা খরচ করে তৈরি হয়েছিল এই বিশাল অট্টালিকা। এ প্রাসাদ মূলত ব্যবহার করা হত সূর্যকান্ত আচার্যের অতিথিশালা হিসেবে। বহু বিখ্যাত ব্যক্তি আসতেন সময় কাটাতে। ১৯২৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে এসে কাটিয়ে গিয়েছিলেন কিছুদিন। শুধু তিনিই নন, শোনা যায় গান্ধীজিও এসেছিলেন এখানে। ক্যাসেলের ভেতরেই সৌন্দর্য্য আটকে থাকেনি। তার বাইরেও রয়েছে সুরুচির স্পষ্ট ছাপ। মূর্তি এবং ফোয়ারার মেলবন্ধন প্রতিফলিত করে ক্যাসেলের রাজসিক ভাবকে।
তবে সময়ের সাথে অতীতের জৌলুস হারিয়ে গেছে। দেশ ভাগের পর ১৯৪৮ সালে এখানে নির্মিত হয় টিচার্স ট্রেনিং কলেজ। প্রথমদিকে প্রাসাদেই ক্লাস নেওয়া হতো। পরবর্তীতে আরও ঘর নির্মাণ করা হয় শিক্ষকদের থাকার প্রয়োজনে। অবশেষে প্রাসাদের মূল ভবনটি গ্রন্থাগার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর ২০১৯ সালে এই ক্যাসেলটিকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে। অতীত ক্ষীণ হতে থাকলেও বিষণ্ণ রোদে আজও মিশে আছে রবি ঠাকুরের মায়া।
Discussion about this post