ঘুরতে যাওয়ার নাম শুনলেই ভ্রমণপ্রিয়রা চিরকালই এক পায়ে খাড়া। দু’একদিন বা তার বেশি ছুটি পেলেই মন যেন আর ঘরে টিকতে চায় না। আর ভ্রমণপিপাসুদের পাহাড় তৃপ্ত করতে পারবে না এ তো কল্পনারও অতীত। রোজকারের হাঁপিয়ে ওঠা জীবন থেকে একটু স্বস্তি পেতে তাই মানুষ আর দু’বার ভাবেন না উত্তরবঙ্গ সফরের কথা। আর এই উত্তরবঙ্গ সফরের সঙ্গে যদি থাকে কবিগুরুর স্মৃতির ছোঁয়া, তবে সেই জায়গা বাঙালিদের বিখ্যাত এক পর্যটন স্থান হয়ে উঠবে এ তো জানা কথা! ঠিক তেমনই এক জায়গা হল পাহাড়ের উপত্যকার কোলে সবুজে ঘেরা লাস্যময়ী এক শৈলশহর কালিম্পংয়ের মংপু।
রবীন্দ্রপ্রেমীরা কমবেশি সকলেই মৈত্রেয়ী দেবীর লেখা ‘মংপুতে রবীন্দ্রনাথ’ লেখাটি পড়েছেন। লেখাটি পড়ে আমরা জানতে পারি কবি মংপুতে এসেছিলেন তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত মৈত্রেয়ী দেবীর আমন্ত্রণে। তবে তিনি একবার নয়,দুবার নয় মোট চার বার গিয়েছিলেন সেখানে। ওখানকার শান্ত স্নিগ্ধ প্রকৃতি এবং সুন্দর সুন্দর পাহাড় তাকে আকৃষ্ট করত বারে বারে। তাই ছুটিতে বেশ অনেকদিন ধরেই তিনি সেখানে থাকতেন এবং কালিম্পং সফরও সেরে ফিরতেন একেবারে।
পাহাড়ের মংপুতে যে বাড়িতে তিনি থাকতেন সেটি এখন রবীন্দ্র ভবন নামে সুন্দর ভাবেই সংস্কার করা হয়েছে। এই ভবনের পরতে পরতে মিশে রয়েছে তাঁর ছোঁয়া। ১৯৩৮ সালের ২১ মে কবি প্রথমবার কালিম্পং থেকে মংপুতে এসেছিলেন। তারপর ১৯৩৯ সালের ১৪ মে পুরী থেকে একেবারে মংপু চলে আসেন কলকাতার তীব্র গ্রীষ্মের হাত থেকে রেহাই পেতে। একই বছরে সেপ্টেম্বর মাসে এসেও তিনি দুমাস মত কাটিয়ে গেছিলেন মংপুতে। শেষবার ১৯৪০ সালে ২১ এপ্রিল যখন গিয়েছিলেন, সেবার সেখানে পঁচিশে বৈশাখে তাঁর জন্মদিন পালিত হয়। তিনি আজকের রবীন্দ্র ভবনে বসেই টেলিফোনে আবৃত্তি করেছিলেন নিজের লেখা ‘জন্মদিন’ কবিতাটি। আকাশবাণী কলকাতা সরাসরি তা সম্প্রচারও করেছিল। সেই বছর শরৎকালে আবারও যাওয়ার কথা ছিল মংপুতে। তবে অসুস্থতার কারণে আর ফেরা হয়নি কবির প্রিয় সেই শহরে।
নাকচ জজের আমন্ত্রণ! চট্টগ্রামে কবিগুরুর ভ্রমণে সঙ্গী হলেন তেনারা
৩৭৫৯ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত মংপু কবির কালে ছিল পাহাড়ি গণ্ডগ্রাম, তবে এখন তা ছোটখাটো এক পাহাড়ি শহর হয়ে উঠেছে। বিশেষত সিঙ্কোনা চাষের জন্যই ভূগোল বইতেও এই জায়গার খ্যাতি ছড়িয়েছে। কালিম্পং থেকে এর দূরত্ব ৩৮ কিলোমিটার আর শিলিগুড়ি থেকে যেতে চাইলে দূরত্ব ৪৭ কিলোমিটার। শিলিগুড়ি থেকে রম্ভি যাওয়ার পথে ডান দিকের রাস্তা ধরে ৯ কিলোমিটার এগোলেই এই শহর। শাল, সেগুন, অর্জুন সহ নানা গাছের সমারোহে মায়াবী এক প্রকৃতি আপনাকে হতাশ করবে না কথা দিলাম। পঁচিশে বৈশাখ তো দরজায় কড়া নাড়ছে। তাই কবিগুরুকে আর একটু কাছ থেকে উপলব্ধি করতে একবার ঘুরে আসতে পারেন সবুজ পাহাড় ঘেরা এই মংপু শহরে।
Discussion about this post