বসন্ত উৎসব বললেই মনে জাগে দুটিই জায়গা। শান্তিনিকেতন আর জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি। আর এসব থেকে ধারণা করাই যায় কবিগুরু দোল উৎসবের প্রতি কী ভীষণ আবেগ তাড়িত ছিলেন। তবে কবিগুরুর কাছে রঙ উৎসব মানে দোল বা হোলি উৎসব নয়, এটি হল ‘বসন্ত উৎসব’। আর এই বসন্ত উৎসবকে কবিগুরু দেখেছেন সর্বজাতির সম্প্রীতির উৎসব হিসেবে। ওদিকে কবি নজরুলও চিরকাল ধর্মের যাঁতাকলকে উপেক্ষা করে বুনেছেন সাম্যের সুর।
১৯২৩ সাল। বাংলায় তখন বিপ্লবের চূড়ান্ত সময়। ‘ধূমকেতু’ লেখার অপরাধে কবি নজরুলের এক বছরের সশ্রম কারাদন্ড চলছে। সেই মূহুর্তেই কবিগুরু দোল উপলক্ষ্যে লিখলেন ‘বসন্ত’ গীতিনাট্যটি। আর ১০ ফাল্গুণ এই বইটির উৎসর্গে নির্ভয়ে লিখে দিলেন “শ্রীমান কবি নজরুল ইসলাম/ স্নেহভাজনেষু।” এর ঠিক তিনদিন পরই দোলযাত্রা। কবিগুরু পবিত্র বন্দ্যোপাধ্যায় নামক এক ব্যক্তিকে দিয়ে বইটি পাঠালেন প্রেসিডেন্সি জেলে নজরুলের কাছে। বিদ্রোহী কবি সেই বই বুকে জড়িয়ে পরম তৃপ্তি অনুভব করলেন। বই নয় যেন সেবছর এভাবেই আবির মাখামাখিটা সেরে নিলেন এই দুই প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব। জেলের যন্ত্রণাও তখন তুচ্ছ হয়ে পড়ে কবি নজরুলের কাছে। পরে যখন ‘সঞ্চিতা’ কাব্যগ্রন্থটি নজরুল উৎসর্গ করলেন তাঁর শুভানুধ্যায়ী গুরুদেবকে।
ধর্ম নয় জাত নয়। একে অপরের প্রতি স্নেহ শ্রদ্ধাকেই বড় করে দেখতেন তাঁরা। একে অপরের লেখাকে প্রাণভরে আত্মস্থ করতেন। রবীন্দ্রনাথ নজরুলের উদ্দেশ্যে বলেন, “কোন কারণেই কবিতা লেখা যেন বন্ধ না হয়। সৈনিক অনেক মিলবে কিন্তু যুদ্ধে প্রেরণা জোগাবার কবিও তো চাই।”
Discussion about this post