বাঙালি এবং চায়ের কাপে তুফান তোলা তর্ক! এ যেন এক সমানুপাতিক সম্পর্ক। ইদানিং সোশ্যাল মিডিয়ার দরজা খুললেই বাঙালিদের সবথেকে বিতর্কিত বিষয় দেখা যাচ্ছে সরস্বতী পুজো। এতে তবে নতুন আর কী? কারণ এমন বিতর্ক যে এই প্রথমবার নয়। ইতিহাস বলছে সরস্বতী পুজো নিয়ে তর্ক-বিতর্ক আগেও ঘটেছে। তাতে জড়িয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুভাষ চন্দ্রের মতো বাংলার নানা তাবড় মানুষ। এমন কী এর জন্য চাকরি পর্যন্ত হারাতে হয়েছে খোদ জীবনানন্দ দাশকে।
হয় তো মানুষ ভাববে, এমন কী বিতর্ক হলো যে কবিকে নিজের চাকরি অবধি খোয়াতে হল? এই ঘটনা প্রায় একশো বছর ছুঁই ছুঁই হতে চলল। ১৯২৮ সালে কলকাতা শহরের বুকে ছড়ায় বিদ্যার দেবীকে নিয়ে এক বিতর্ক। ঘটনাটি ঘটে কলকাতার সিটি কলেজকে ঘিরে। সিটি কলেজের রামমোহন হোস্টেল নিবাসী ছাত্ররা ঠিক করেন তাঁরা সরস্বতী পুজোর আয়োজন করবেন। কিন্তু মাঝখানে তৈরি হল এক ঝামেলা। কলেজের প্রতিষ্ঠাতা আনন্দমোহন বসু আবার ছিলেন স্বয়ং ব্রাহ্ম সমাজের একজন প্রতিনিধি। তিনি কখনোই ছাত্রাবাসের মধ্যে দেবীর আরাধনার সম্মতি দেবেন না। এই নিয়ে হিন্দু ছাত্রদের মধ্যে বিক্ষোভ শুরু হয়।
এমন অবস্থায় তখন বাংলার অন্যতম যুব নায়ক সুভাষ চন্দ্র বসু সিটি কলেজের ছাত্রদের পক্ষ নেন। সুভাষচন্দ্র বসু প্রথম থেকেই বাগদেবীর আরাধনা করতেন। তাঁর মতো তাবড় ব্যক্তিত্ব জানান, তিনি ছাত্রদের পক্ষে এবং ছাত্রাবাসে পুজো হবে। এদিকে ব্রাহ্ম সমাজের অন্যতম প্রতিনিধি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি যথারীতি এই ঘটনার বিপক্ষে বলতে শুরু করেন। রবি ঠাকুর এই নিয়ে একটি লেখাও প্রকাশ করলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল আসলে যে সিটি কলেজ যেহেতু ব্রাহ্মদের তাই এসব আবদার ঠিক নয়।
কিন্তু এসব বিতর্কের মাঝখান থেকে চাকরি হারালেন জীবনানান্দ দাশ। আসলে এইসব তর্কের মধ্যেই চারজন হিন্দু ছাত্রকে বহিষ্কার করা হয়েছিল সরস্বতী পুজোর আয়োজনের জন্য। এই ঘটনা হিন্দু ছাত্রদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। ধীরে ধীরে বহু হিন্দু ছাত্র কলেজ ছেড়ে দেয়। ফলতঃ টান পড়ে কলেজের কোষাগারে। এবার জীবনানন্দ সদ্য অস্থায়ী শিক্ষক হয়ে কলেজে নিযুক্ত হয়েছিলেন। কলেজের টাকা কমতে থাকার জন্য অনেক শিক্ষককেই ছাঁটাই করা হয়। জীবনানন্দ তাঁদের মধ্যেই একজন ছিলেন। অর্থাৎ এসব হট্টগোলের মাঝে খোরপোষ দিতে হল আমাদের প্রিয় কবিকে। তবে এই বিতর্ক যে থামবার নয় তা তো বোঝাই যাচ্ছে। যতদিন বাঙালি ততদিন এমন টক মিষ্টি ঝাল বিতর্ক চলবেই।
Discussion about this post