বিংশ শতাব্দীর শেষ দিক থেকেই ভারতীয় দের মধ্যে ক্রিকেট নিয়ে সমূহ উত্তেজনা। যত দিন এগোচ্ছে, এই উন্মাদনা বাড়ছেই। আইপিএল থেকে বিশ্বকাপ, সবেতেই তার ছাপ। বাঙালিরাও এর বৈচিত্র্য নয়। এখন প্রশ্ন এটাই, এই ক্রিকেটের বাঙালী জীবনে আগমন কিভাবে? আচ্ছা রবীন্দ্রনাথও কি ক্রিকেট খেলতেন বা খোঁজখবর রাখতেন?
উত্তরটা হলো, হ্যাঁ। বিভিন্ন সময়ে রবীন্দ্রনাথ এই ক্রিকেট ব্যাপারটির উপর বেশ আগ্রহ দেখিয়েছেন। ওনার মুকুটে পালক সংখ্যা নেহাৎ কম নয় উপরন্তু সমস্ত কলাবিদ্যার উপর একচ্ছত্র বিস্তার। এর সঙ্গে ক্রিকেটও একটা সংযোজন। তাঁর এই ক্রিকেটীয় আগ্রহ শুরু হয় ব্রজমোহন সরকারের হাত ধরে। ব্রজমোহনবাবু সর্বপ্রথম বাংলায় ক্রিকেট নিয়ে লেখা শুরু করেন। কিন্তু লিখতে গিয়ে বেশ কিছু ইংরাজী শব্দের বাংলা পরিভাষা খুঁজতে গিয়ে পড়লেন বিপাকে। অতঃপর শরণার্থী হলেন ঠাকুরের। বিশ্বকবি তখন বজ্রমোহনের এই কাজটা আরো সহজ করে দিয়েছিলেন।
এছাড়া ১৯৬২ সালের ৩ জানুয়ারি আনন্দবাজারে প্রকাশিত একটি চিঠিতে তাঁর ক্রিকেট খেলার স্পষ্ট উল্লেখ পাওয়া যায়। জগদীশচন্দ্র রায়ের এই চিঠিতে স্পষ্ট দেখা যায় যে রবীন্দ্রনাথ রীতিমতো ক্রিকেট খেলতেন। তাঁর আগ্রহেই ঠাকুর বাড়িতে খেলার আয়োজন হতো এবং দুই অ্যাংলো খেলা শেখাতেন। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন ক্রিকেটের উদ্যোক্তা।
আরো একটি ঘটনা জানা যায়, বিহারের গোমো শহরে রবীন্দ্রনাথ একবার হঠাৎ এলেন। তিনি আয়োজন করলেন একটি ক্রিকেট ম্যাচ। সারা দেশের রাজারা, জমিদারেরা এসে খেলায় অংশগ্রহণ করেন। কুচবিহারের রাজা, পাতিয়ালার রাজারাও ছিলেন এই অনুষ্ঠানে। ইফতিয়ার আলি খান পতৌদি , দুলীপ সিং জির মতো বড় মাপের খেলোয়াড়রা এসেছিলেন এখানে। এমনকি প্রফেসর ক্ষিতি মোহন সেন (অমর্ত্য সেনের পিতা) এবং আচার্য বিধুশেখর শাস্ত্রী এই অনুষ্ঠানের বেদমন্ত্র উচ্চারণ করে উদ্বোধন করে ছিলেন।
পরে সারা ভারত জুড়ে স্বদেশী আন্দোলনের সময় ধুতি পড়ে তিনি খেলতে নেমেছিলেন। খেলার ফলাফল জানা যায়নি তবে এই খেলা বেশ উল্লেখযোগ্য ছিল। এভাবেই রবীন্দ্রনাথ তাঁর সার্বিক বিস্তারের ছাপ রেখেছিলেন ক্রিকেটেও। একজন প্রতিভাশালী কবি হয়েও নিজেকে নিছকই কখনো বেঁধে রাখেননি শুধুমাত্র শিল্পে। বরং নিজেকে বিভিন্নভাবে মেলে দিয়েছেন সমস্ত সম্ভাব্য ক্ষেত্রে।
Discussion about this post