“দান কিংবা ত্রাণ নয়, আমরা সংহতি পৌঁছে দিই মানুষের কাছে।” এই কথাটুকুই বারবার ‘কোয়ারেন্টাইনড স্টুডেন্ট ইউথ নেটওয়ার্ক’-এর সদস্যদের নিঃশব্দে সাধারণ মানুষের পাশে থাকার মুহূর্তগুলোর জানান দিয়ে যায়। আমফানে বিভৎসভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে একের পর এক স্থান। তাই বারংবার বিধ্বস্ত মানুষের কাছে সংহতি পৌঁছে দিতে তারা গিয়েছেন বিভিন্ন জায়গায়। আর এবার তারা পৌঁছে গেলেন পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পট হিসেবে বিখ্যাত মৌসুনী দ্বীপে। জানা গিয়েছে, ২০০৯ সালের আয়লা এবং তারপর আমফান এই দুইয়ের দাপটে ভয়ঙ্কর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এই দ্বীপের। যা ঠিক হতে কম করে মাস ছয়েক থেকে এক বছর পর্যন্তও লেগে যেতে পারে।
ডেইলি নিউজ রিল যোগাযোগ করে QSYN সদস্য শুভ আজাদের সঙ্গে। যিনি প্রায় একাই দায়িত্ব নিয়ে কলকাতা থেকে পৌঁছে গিয়েছেন মৌসুনী দ্বীপে। আর সেখানে গিয়ে গ্রামের আরও ৩০০ জনকে নিয়ে গঠন করেছেন ‘পিপলস কিচেন’। ডেইলি নিউজ রিলের কাছে শুভ আজাদের বক্তব্য, ‘দান কিংবা ত্রাণ নয়, সংহতি পৌঁছে দিচ্ছি আমরা। যাতে কিছুদিনের জন্য এই মানুষগুলো অন্ততঃ একবেলা হলেও খেয়ে এই লড়াইটা লড়তে পারে।’ আশেপাশের গ্রাম মিলিয়ে বেশ কিছু গ্রামের মানুষের একবেলার খাবারের দায়িত্ব নিয়েছেন QSYN। প্রত্যেক দিনে প্রায় ৪০০ থেকে প্রায় ৯০০ জনের মুখে তারা তুলে দিচ্ছেন খাবার। শুভ আরও জানান, ২০০৯ এর আয়লার দুর্যোগের পরই মৌসুনী দ্বীপের বালিয়াড়া গ্রামের ১২ নং সয়ালের বাঁধ ভেঙে যায়। সেই বাঁধের মেরামতি এখনও হয়নি। ফলতঃ জল বাঁধলেই কিংবা জোয়ার এলেই সেই জলে ভেসে যায় আশেপাশের গ্রাম, ঢুকে যায় নোনাজল। ফলে চাষবাসের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে এখানকার মাটি। তাই এখানকার বেশিরভাগ মানুষই মৎস্যজীবী। এই তিন মাস মাছের ডিম পাড়ার সময়, তাই মাছ ধরাও বন্ধ। যার ফলে এক প্রকার খালি পেটে দিন কাটছিল গ্রামবাসীদের।
অন্ততঃ ৭ থেকে ৮ দিনের পরিকল্পনা নিয়ে মৌসুনী দ্বীপে শুরু হয়েছে পিপলস কিচেনের কাজ। এর পরবর্তীতে যে পরিমাণে কাঁচামাল অর্থাৎ চাল, ডাল, আলু, পিঁয়াজ, সয়াবিন ইত্যাদি বেঁচে যাবে তা দিয়ে QSYN রেশনের ব্যবস্থা করে দেবে মৌসুনী দ্বীপবাসীদের জন্য, বলেও জানান উদ্যোক্তারা। বুকে এক ঝাঁক স্বপ্ন নিয়ে আবারও নতুন করে মাথা তোলার লড়াই লড়ছে ‘মৌসুনি দ্বীপ’-এর গ্রামবাসীরা। আর তাতেই QSYN রোজ বেঁচে ওঠার স্বপ্ন দেখাচ্ছে। দুইয়ে মিলিয়ে তারা যেন সেই এক ঝাঁক ইচ্ছে ডানা। যাদের এবার বেঁচে থাকার স্বাধীনতা মিলবে, মিলবেই!
Discussion about this post