জগদ্ধাত্রী পুজো! কথাটা শুনলেই, চোখের সামনে ভেসে ওঠে আলোকসজ্জিত চন্দননগরের ছবি। যদিও সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়েই এই পুজোর প্রচলন। তবু জগদ্ধাত্রী পুজো মানেই সাধারণ মানুষের কাছে চন্দননগর এবং কৃষ্ণনগরই বেশি জনপ্রিয়। কিন্তু এই পশ্চিমবঙ্গের মাটিতেই এমন একটি জায়গা আছে যেখানে এক গ্রামেই হয় ২৬ খানা পুজো। অনেকেই জানে অথবা হয় তো অনেকেই জানেনা সে জায়গার কথা। তাহলে জানা যাক, মুর্শিদাবাদ জেলার বুকে বিখ্যাত সেই বনেদী গ্রাম কাগ্রামের কথা। জগদ্ধাত্রী পুজোয় মেতে ওঠে সারা গ্রাম।
কান্দি মহকুমার অন্তর্গত কাগ্রাম হলো পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে অন্যতম প্রাচীন জনপদ। অত্যন্ত প্রাচীন এই জনপদে এক সময়ে ঘোড়ার গাড়ি চলত। বনেদী এই গ্রামে বহু যুগ ধরে বড়ো করেই জগদ্ধাত্রী পুজো পালিত হয়ে আসছে। এই গ্রামের নামকরণ করা হয়েছে তাঁদের গ্রাম্য দেবী কঙ্ক চণ্ডীর নাম অনুসারে। পারিবারিক এবং সর্বজনীন পুজো মিলিয়ে প্রায় মোট 26 টি পুজো হয় এখানে। বলা বাহুল্য এই গ্রামের চল্লিশ শতাংশ মানুষ মুসলিম ধর্মের। কিন্তু ধর্ম এখানে মিলে মিশে একাকার। উৎসবের সময়ে গ্রামের সমস্ত মানুষ সেই আনন্দে সামিল হয়। গ্রামে বহু প্রাচীন যুগ থেকেই চলে আসা পুজোর প্রচলন, তাদের মধ্যে অন্যতম মহাশয় বাড়ির পুজো। এই পুজো নাকি শুরু হয় প্রায় রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সময় থেকে। তাঁর পুজো দেখেই এই পরিবারের পূর্বপুরুষেরা শুরু করেন তাঁদের বাড়ির জগদ্ধাত্রী পুজো। সাবেকী রীতি মেনে এখনও অবধি হয় মহিষ বলি। পাল বাড়ির পুজো, সাহা বাড়ির পুজো ও গ্রামের অন্যতম বিখ্যাত বনেদী পুজো। তা বাদেও বহু পুরনো এখানের বিভিন্ন পাড়ার সর্বজনীন পুজোগুলিও।
সালার স্টেশন থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরত্বেই অবস্থান এই কাগ্রামের। সবথেকে সুন্দর বিষয় হলো এই গ্রামে ধর্মের উর্ধ্যে গিয়ে উৎসব পালন। এই ঐতিহ্য কিন্তু আজকের না। এইটি চলে আসছে যুগের পর যুগ ধরে। গ্রামের সকলে একসাথে মিলে মেতে ওঠে জগদ্ধাত্রী পুজোয়। অবশ্যই কাগ্রামে সমস্ত রকম উৎসব পালিত হয়। তবে দুর্গা পুজো, কালী পুজোর থেকেও বেশি জনপ্রিয় এখানের জগদ্ধাত্রী পুজো। আলোক সজ্জায় কাগ্রামও একটুকুও পিছিয়ে নেই। এভাবেই বহু যুগের ঐতিহ্য রক্ষা করে চলেছে কাগ্রাম এবং আগামী দিনেও তা বজায় থাকুক!
Discussion about this post