ঢাকা শহরের নানান রকম ঐতিহ্য বুঝি অতীতের দলে ভিড়েছে! এ দেশের সাংস্কৃতিক গর্ব ছিল তিনটে মিছিল। এক ঈদের, দুই মহরমের আর তিন জন্মাষ্টমীর মিছিল। ঈদ আর মহরমের মিছিল কোনো রকমে টিকে আছে ঠিকই তবে আগের মত জাঁকিয়ে আনন্দ আর নেই। সবটাই পাল্টে গেছে। তবে হারিয়ে যাওয়ার দলে নাম লিখিয়েছে জন্মাষ্টমীর মিছিল।
এ মিছিলে আগে হিন্দু মুসলিম ধর্ম নির্বিশেষে কাতারে কাতারে ভিড় জমতো মানুষের। গোটা বছর ঢাকার মানুষেরা এ মিছিলের অপেক্ষায় থাকতো। শোনা যায়, খোদ ঢাকার পত্তনকারী ইসলাম খাঁ আসার আগেই ১৫৫৫ সালের দিকে এক সাধু থাকতেন। তিনি বংশালের কাছে পিরু মুন্সীর পুকুরের ধারে বাস করতেন। তিনিই সে বছর ভাদ্র মাসে রাধাষ্টমী উপলক্ষে একটি মিছিল আয়োজন করেন। সে মিছিলের বালক ভক্তদের প্রত্যেকের গায়ে ছিল হলুদ পোশাক।
এরপর এর দশ বছর পর ১৫৬৫ সালে প্রথম বের হয় জন্মাষ্টমীর মিছিল। যার প্রধান দায়িত্বে ছিলেন নবাবপুরের ধনী ব্যবসায়ী কৃষ্ণদাস বসাক। সেই সময় থেকেই এ মিছিল সকলের কাছে এক বিরাট উৎসবে পরিণত হয়েছিল। নবাবপুরের ধনী মানুষেরাই এরপর থেকে এই মিছিলের যাত্রা প্রতিবার আয়োজন করতে থাকে। সেই থেকে এ মিছিলের নতুন নাম হয় নবাবপুরের মিছিল। ১৭২৫ সাল থেকে ইসলামপুর থেকেও আয়োজিত হয় আরেক মিছিল। ১৮৫৩ সালে দুই মিছিলের সংঘর্ষের আশঙ্কায় সরকারী নিয়মে দুই মিছিল দুদিন ধরে বের হয়।
উনিশ শতকের মধ্যেই এ মিছিল চূড়ান্ত জনপ্রিয়তা লাভ করে। এই মিছিল সম্পর্কে স্মৃতিচারণা করে এক গৃহবধূ মনোদা দেবী লিখেছেন, “এই মিছিল দেখার জন্য গ্রাম গ্রামান্তর তো বটেই, কলকাতা থেকে লোকজন এসে আত্মীয়দের বাড়িতে উঠে, বাড়িকে আনন্দ মুখরিত করে তুলতো…” এ মিছিল দেখতে আসার জন্য রোজ নৌকা ভাড়া পাওয়া যেতো। যে যেই নৌকায় আসতো মিছিল দেখে আবার সেই নৌকায় ফিরে যেতো। তবে ১৫৫৫ থেকে শুরু করে এ মিছিল পাঁচবার বন্ধ থেকেছিল। বর্গীর হামলা, বৃন্দাবন দেওয়ান ঢাকা লুট করার সময়ে, প্রথম ব্রহ্ম যুদ্ধের ক্ষেত্রে আর নবাবপুর ইসলামপুর সংঘর্ষের ঘটনা এই নিয়ে পাঁচবার। যদিও এ মিছিলের অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় না।
চিত্র ও তথ্য ঋণ – Stay Curious SIS
Discussion about this post