‘প্রিন্স অব ওয়েলস’ নামটা শুনে মনে বিদেশের ছবি উঁকি দিলো বুঝি? আসলে এটি সেই দেশের বেকারি যাকে কাঁটাতার আজও আমাদের মনে ভাগ করতে পারেনি। হ্যাঁ, সেই বাংলাদেশেরই সবচেয়ে পুরনো বেকারি হল এই প্রিন্স অব ওয়েলস। তবে এর সঙ্গে ব্রিটেনের সংযোগ আছে বৈকি। এর পত্তন ব্রিটিশ ভদ্রলোক মি. ওয়েলস এর হাত ধরেই। তিনি ১৮৫০ সালে পা রাখেন অবিভক্ত বাংলায়। তিনি ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করেন এই বেকারি। আর তাঁর নাম অনুসারেই রয়ে যায় গিয়েছে এটি।
বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময়ে উত্তাল বাংলাদেশ ছেড়ে নিজের দেশে যাওয়ার সময়ে তিনি এর দায়িত্ব দিয়ে যান বুদ্ধু মিঞার কাছে। এই বুদ্ধু মিঞা ১২ বছর বয়স থেকে এই বেকারিতেই কাজ শিখেছিলেন। এরপর পৈতৃক সূত্রে এর মালিকানা পান নুরুদ্দিন আহমেদ। আর বর্তমানে এটি পরিচালনা করছেন এনার পুত্র রাজেশ আহমেদ। আজও ক্রিস্টমাসের সেরা পণ্য মেলে পুরান ঢাকার প্রিন্স অফ ওয়েলস বেকারিতেই।
বাংলাদেশবাসীদের জন্য রইলো পৌঁছে যাবার ঠিকানা। পুরান ঢাকায় রায়সাহেব বাজার থেকে সদর ঘাট যাবার পথেই পড়ে ভিক্টোরিয়া পার্ক। এই পার্ক থেকে বাঁ-দিকে ঘুরে কিছুদূর এগোলেই পরে লক্ষ্মীবাজার। এখানেই আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ‘প্রিন্স অব ওয়েলস’, যার বয়েস ১৭০ পেরিয়েছে। মি. ওয়েলসের এই বেকারি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য মূলত ভারতে আসা ব্রিটিশদের কথা ভেবেই। আর লক্ষ্মীবাজারকে বেছে নেওয়ার কারণ সেন্ট গ্রেগরি মিশন এবং তার আশেপাশের খ্রিস্টান এলাকা।
বেকারির সঙ্গেই রয়েছে কারখানা। পুরনো ধারা বজায় রেখে সনাতন পদ্ধতিতে তৈরি করা হয় কেক, বাটার বন, ক্রিম রোল, পেস্ট্রি, প্যাটিস, প্যান কেক ইত্যাদি আরো নানান খাবার। কারখানা, যন্ত্রপাতি সবই এখনো আদিকালের। তবে এখানকার বিশেষ আকর্ষণ বড়দিনের কেক। পার্শ্ববর্তী খ্রিস্টানদের বলতে শোনা যায় -বড়দিনের কেক বিশেষ করে ফ্রুটকেক প্রিন্স বেকারির না হলে যেন বড়দিনের আনন্দই হয় না।
Discussion about this post