পয়লা বৈশাখ পালন হয়ে গেলো একদিন আগেই। শুধু এবার নয়, প্রতি বছরই বাংলাদেশের পয়লা বৈশাখ উদযাপন হয় একদিন আগে। বাংলাদেশের বাংলা দিনপঞ্জি যা বাংলা একাডেমীর নির্ধারিত সেখানে প্রতিটি বাংলা মাসই ধরা হয়েছে ৩০ দিনে। তাই সেটিতে আর তিথি পক্ষ মেনে তারিখের গরমিল হয় না। প্রতিবছরই এপ্রিলের ১৪ তারিখে বাংলাদেশ বর্ষবরণ করে।
উভয়েই বাঙালি হলেও পশ্চিমবঙ্গের সাথে বাংলাদেশের নববর্ষ পালনে রয়েছে প্রচুর ভিন্নতা। বাংলাদেশের সবথেকে বড় সর্বজনীন উৎসব হলো পয়লা বৈশাখ। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাই বাংলা নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাট আকবর খাজনা আদায় এবং হিসেবের সুবিধের জন্য বাংলা দিনপঞ্জি চালু করেন। এরপর সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে সুবেদার ইসলাম খাঁ চিশতি ঢাকা’কে রাজধানী হিসেবে গড়ে তোলেন। সেখানকার হিসেব নিকেশ শুরু করার জন্য বাংলা বছরের প্রথম দিন উৎসব পালন শুরু হয়। সম্রাট আকবরের অনুকরণে সুবেদার সাহেবও নিজ বাসভবনের সামনে প্রজাদের শুভেচ্ছা বিনিময় ও মিষ্টি বিতরণ করেন। সমাজের সকল স্তরের মানুষ সেখানে উপস্থিত থাকতো। খাজনা আদায়ের সাথে চলতো নাচ গান, খেলাধুলো, গরু মোষের লড়াই। এই প্রথাই এখন হালখাতা নামে পরিচিত। সকল ব্যবসায়ী এইদিন হিসেবের নতুন খাতা খোলেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যবসায়ীরা এর সাথে লক্ষ্মী গণেশের পুজো করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে এখন প্রতি বছর রমনার বটমূলে এদিনের প্রথম প্রহর পালন হয়। ‘এসো হে বৈশাখ’ গেয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়। এরপর বেরোয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা এর আগে দিনরাত পরিশ্রম করে তৈরি করে ভাস্কর্য, ফেস্টুন, মুখোশ আরও কতো কি। দেশ জুড়ে সমস্ত স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে এবং অন্যান্য সংগঠনে উদযাপিত হয় পয়লা বৈশাখ। সকলে লাল সাদা শাড়ি পাঞ্জাবিতে সেজে প্রভাত ফেরীতে অংশ নেয়। ঝুড়ি, কুল্ ফুল এরকম হরেক বাংলার সম্পদ নিয়ে তারা বৈশাখী মেলায় যায়। নাচ গান কবিতায় মুখরিত থাকে চারিদিক। চলে মিষ্টি খাওয়ার প্রতিযোগিতা।
বৈশাখী মেলার বিভিন্ন খাবারের দোকানে থাকে ইলিশ পান্তা, হরেক রকম ভর্তা, মাছ ভাজা, মাংস আর শরবতের আয়োজন। পান্তা দেশের কৃষক সম্প্রদায়ের নিত্যদিনের খাবার আর ইলিশ দেশের ঐতিহ্য। বাংলাদেশের মানুষের নিত্যদিনের প্রধান খাবার মাছ আর ভর্তা। সাথে পিঠে, পায়েস, মিষ্টিতো থাকছেই। মাটির পাত্র বা কলাপাতায় থাকে খাবার ব্যবস্থা। সকলেই নিজেদের বাড়িতে এসব খাবারের ব্যবস্থা করেন। আবার অনেকেই বাইরে গিয়ে উৎসব মুখর পরিবেশে খাওয়া দাওয়া করেন। তীব্র রোদ গরমে বাইরে বেরোনো অনেকেই পছন্দ করেন না। তারা নিজেদের বাড়িতেই আয়োজন করেন বর্ষবরণের। সাজিয়ে তোলেন নিজেদের বাড়ি বাঙালিয়ানায় বা গ্রাম্য সাজে। ভেদাভেদ ভুলে একটা দিন বাংলাদেশ হয়ে ওঠে অন্য।
Discussion about this post