অভিযোগ বিয়ের ৩২ বছর এবং যৌথ পরিবারে থাকার ১৪ বছর ধরে মানসিক হয়রানি এবং মৌখিক যৌন হেনস্থার শিকার তিনি। অবশেষে বড়তলা থানায় অভিযোগ দায়ের করলেন প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তনী, অনুবাদিকা, লেখিকা, ব্যাঙ্গালোর ও দুন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্প্যানিশ ভাষার প্রাক্তন অধ্যাপিকা অরুন্ধতী ভট্টাচার্য। অভিযুক্ত তাঁর নিজেরই খুড়শ্বশুর দেবকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়।
১৯৯১ সালে বিয়ের পর অরুন্ধতী দেবী আসেন তাঁর ২৪ নম্বর হরি ঘোষ স্ট্রীটের শ্বশুর বাড়িতে। তিনি জানান, বিয়ের পর থেকেই যৌথ পরিবারে শুরু হয়েছিল মৌখিক ও মানসিক নির্যাতন। পরিবারের অধিকাংশ মহিলাদেরই হেনস্থা, মারধর পর্যন্ত করা হয়েছে। ডেইলি নিউজ রিলের কাছে কথা বলতে গিয়ে অধ্যাপিকা তাঁর শ্বশুরবাড়িকে অভিহিত করেছেন “ফিউডাল, পঞ্চদশ শতকের মধ্যযুগীয় পরিবার” বলে। সারাজীবন ধরেই তিনি তাঁর উচ্চশিক্ষা, স্বাধীনচেতা চলাফেরা, মেলামেশা, পোশাকের নির্বাচনের জন্য অশ্লীল কটুক্তি সহ্য করে এসেছেন। এছাড়া ‘বাজারের মেয়ে ছেলে’, ‘রাস্তার মেয়ে ছেলে’ এই ধরণের নারীবিদ্বেষী উক্তি তো আছেই।
অধ্যাপিকা জানিয়েছেন সাম্প্রতিককালে প্রকাশ্যে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিকভাবে তাঁকে কটুক্তি করা হয়েছে এই বলে যে, ” (অভিযুক্ত দেবকুমারবাবু) আমার ছেলে যে আবাসনে থাকে সেখানে তাদের পরিবারটি বাদে বাকি সবাই মুসলিম। ওরা খুব উচ্চশিক্ষিত। তুমি ওখানে যেও, তোমার ভালো লাগবে, তুমি ওখানে গেলে খুব এনজয় করতে পারবে।“ তিনি এও বলছেন, “আমার এবং আমার স্বামীর অসংখ্য বন্ধুদের মধ্যে কেবলমাত্র নির্দিষ্ট মুসলিম ধর্মের বন্ধুকেই নিশানা করে এই মন্তব্য। থানায় এই মুসলিম বিদ্বেষের কথা জানানোর পরেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।”
অভিযোগ দায়ের করার পরে স্বামী-পুত্র ছাড়া গোটা পরিবার আজ তাঁর বিরুদ্ধে। কেউ বলেছেন কেন অপমানের পরেও তিনি নারীসুলভ আচরণে কেঁদে ফেলেননি বা ঝগড়া করেননি, কারো দাবি ঘরের কথা বাইরে এনে অরুন্ধতী দেবী ঠিক কাজ করেননি।ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর অভিযোগকারিণীর ছেলেকে অভিযুক্তের পুত্র সৌম্যকান্তি ফোন করে হুমকি দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেছেন অধ্যাপিকা। আশ্চর্যজনকভাবে সেই হুমকির কথা পুলিশকে জানানোর পরেও চার্জশিটে তার উল্লেখ নেই। অরুন্ধতী দেবী আশঙ্কা করেছেন এর পিছনে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের প্রভাব রয়েছে।
এই ঘটনায় যৌন হেনস্থা ও লিঙ্গবৈষম্যমূলক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে অরুন্ধতী ভট্টাচার্যের পাশে দাঁড়িয়েছে প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন ও বর্তমান পড়ুয়াদের এক প্রতিনিধি দল। সেই দলেরই এক মুখ বন্দনা জানিয়েছেন, “আইন তার মত করে যাবে, আমরা তার পাশেও আছি। তবে ‘ভার্বাল অ্যাবিউজ’ও যে যৌন হেনস্থাই, এই বিষয়টিও সামনে আনা প্রয়োজন। সামাজিক প্রতিবাদ ও কর্মসূচীর মধ্য দিয়েই তা ঘটবে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে বিশ্বাস করি।“
এ প্রসঙ্গে আমরা অভিযুক্তের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলাম। তিনি কথা বলতে চাননি। পরিবর্তে অভিযুক্তের স্ত্রী সুলেখা ব্যানার্জি সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছেন তাঁদের মতে গোটা বিষয়টি আসলে একটি ভুল বোঝাবুঝি।
Discussion about this post