একটি ছোট্ট ম্যাগপাই পাখি,ভালবেসে তাঁর নাম রাখা হয়েছিল ‘পেঙ্গুইন’। আদরের ‘পেঙ্গি’ পরিবারে আসতেই কেমন বদলে গিয়েছিল পক্ষাঘাতগ্রস্ত স্যামের জীবন। কথা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ান প্রাক্তন মহিলা সাঁতারু স্যাম ব্লুমের। সালটা ২০১৩। গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে সপরিবারে থাইল্যান্ডে হাজির স্যাম। সবুজে ঘেরা সৈকতে সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাস,থাইল্যান্ডের রূপে মুগ্ধ স্যামের ছেলে থেকে স্বামী সকলেই। হোটেলের ছাদ থেকে থাইল্যান্ডের সৌন্দর্য্য যেন আরো ভালোভাবে বোঝা যায়। নীলচে-সবুজ সমুদ্র যেন বারবার হাতছানি দিয়ে ডাকছে। এখনো পর্যন্ত সবটাই ঠিক ছিল। ছাদে তখন স্যাম ও তাঁর ছেলে। ঝাঁ-চকচকে হোটেলের ছাদ থেকে নীচের সমুদ্র দেখছে। কিন্তু এমন হোটেলের ছাদের রেলিংয়ে যে ফাটল, কারো চোখেই পড়েনি। জং ধরা রেলিং ভেঙ্গে সোজা ২২ ফুট নিচে স্যাম। সবই যেন দুঃস্বপ্ন! এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না। ২২ ফুট নিচে পড়ে ভেঙে গেছে শিড়দাঁড়া থেকে কোমর।মাথায় চোট অতি গুরুতর। জলকে ভালোবেসে একসময় আন্তর্জাতিক সাঁতারু হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল। আর এখন কোমর থেকে শরীরের বাকি অংশ পুরোটাই অবশ। হুইল চেয়ারেই কাটাতে হবে বাকি জীবন।

কিন্তু এখানেই জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় তাঁর আদরের ‘পেঙ্গুইন’। সমুদ্র সৈকতে পাইন গাছের নিচে সেই ম্যাগপাই পাখির ছানাকে উদ্ধার করেছিল স্যামের ছেলেরা। ম্যাগপাইটির শারীরিক অবস্থা তখন মোটেই ভাল ছিলনা। ভেঙে গিয়েছিল একটি ডানা। সাদা-কালো পালকে ঢাকা সেই ক্ষতবিক্ষত দেহকে নিয়ে তারা হাজির হয় চিকিৎসকের কাছে। কিন্তু এই পাখিকে বাঁচাতে পারবে না বলে আগেই হাত তুলে নেয় চিকিৎসক দল। অগত্যা বাড়িতেই চলতে থাকে তার সেবা শুশ্রূষা। শুরুর দিকে ম্যাগপাইটিকে প্রচন্ডরকম অসহ্য লাগলেও, কেমন করে জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছিল সে। উড়তে পারত না। দুই ছোট্ট পায়ে পুরো বাড়ি জুড়ে অবাধ বিচরণ। চোখের সামনে তাকে না পেলেই অস্থির হয়ে উঠত স্যামের মন। নাম রাখা হলো ‘পেঙ্গুইন’।

সেই ‘পেঙ্গুইন’ হয়ে উঠল স্যামের অবসাদের ওষুধ। ডানা ঝাপটিয়ে রোজ চেষ্টা করত ওড়ার। ব্যর্থ হত রোজ। তবুও সে হাল ছাড়েনি। রোজকার এই ঘটনা শক্তি জোগাতে থাকে স্যামের মনকেও। শুরু হয় ফিজিওথেরাপি। ধীরে ধীরে আবার শুরু হলো তার ‘সার্ফিং’ জীবন। পেঙ্গুইনেরও তখন ডানা ঠিক হচ্ছে একটু একটু করে। একদিন সেও সফল হল। সত্যি সত্যি উড়ে গেল ডানা ঝটফটিয়ে। স্যামের মন খারাপ হলো ঠিকই, কিন্তু এই সাফল্য বদলে দিল তাঁর নিজের জীবনকেও। যুক্ত হলেন অস্ট্রেলিয়ার প্যারা সার্ফিং দলে। সোনা জয় করলেন ওয়ার্ল্ড প্যারা সার্ফিং চ্যাম্পিয়নশিপে ২০১৯ ও ২০২০ সালে। ‘পেঙ্গুইন’ আর ফিরে আসেনি। হয়তো সেও নতুন বাসা বেঁধেছে কোথাও। একটি ছোট্ট পাখির আগমনে কেমন বদলে গিয়েছিল তাঁর বাকি জীবন। হয়তো এভাবেই রূপকথারা সত্যি হয়ে যায়!
Discussion about this post