ছবি প্রতীকী
আমাদের কলকাতা প্রায় প্রতিদিনই কম বেশী জড়িয়ে থাকে জীর্ণতা, ক্লেশ, গ্লানি আর হতাশার আবরণে। দিন গত পাপ ক্ষয়ে মানুষ রোজই ব্যস্ত। কলকাতার মলিন আবরণের মাঝে হিরের জৌলসের মতো দীপ্ত হয় দুর্গা পুজোর মাধ্যমে। কনজিউমারিজম আমার নগর সভ্যতাকে সর্বদা তাড়া করে বেড়ায়। ক্লাইভের সময় দুর্গা পুজোর সূচনা বলা যায়। যদিও পুজোর প্রভাব প্রতিপত্তির গোড়া পত্তন ওয়ারেন হেস্টিংসের সময় থেকে। দুর্গা পুজোর ইতিহাস ঘাঁটতে গিয়ে অনেক কিছুই জানা যায়। পুরনো কলকাতার বুকে পুজোকে কেন্দ্র করে লাঠি খেলার মতো প্রদর্শনী ছিল। যেটা আজও বাগবাজারে অষ্টমীর দিন উদ্যাপিত হয়। সত্তরের গোড়ার দিকে হিপি সংস্কৃতির’ প্রভাব পড়ে বারোয়ারী দুর্গাপুজোর সময়। প্যান্ডেলে চাঁদা তুলে নেশাভাঙ, হিন্দির গানের জোয়ারে তাল রেখে উদ্দাম নৃত্য। এই চিত্রও পাওয়া গেছে। আশির দশকে আবার বাঙালি জীবনে বাংলা গান, সাবেকিয়ানা কলকাতার মন্ডপে দেখা যায়।
আজ আমরা পৌঁছে গেলাম রবীন্দ্রসরণীর ট্রামলাইনের গায়ে, যাত্রা পট্টির পাশে নতুন বাজার ঘেঁষে একটা গলি। পাথুরিয়া ঘাটা ৫- এর পল্লী বড়বাজার। মূলতঃ অবাঙালিদের পাড়া। মাত্র পঞ্চাশটা বাঙালি পরিবার রয়েছে এখানে। গায়ে গায়ে বাড়ি। এখানে আকাশ যেন বিক্রি হয়। পাঁচটা ক্লাবের সদস্যরা মিলে এই পুজোর আয়োজন করে। অবাঙালি সংস্কৃতির রমরমার মধ্যেও এখানকার মানুষজন নিজেদের বাঙালি সংস্কৃতির অস্তিত্বকে ধরে রেখেছে এই পুজোর মাধ্যমে। মন্ডপ পরিকল্পনার জন্য আশুতোষ শী সাহায্য করে থাকেন। মেদিনীপুর অঞ্চল থেকে কারিগররা আসেন। তাঁরা কাজ করেন দিন মজুরির ভিত্তিতে। নতুন কোন উপাদানকে সামনে আনা বা চেনা কোন উপাদনকে ভিন্ন রূপে উপস্থাপন এই পুজোর আরেকটা বৈশিষ্ট্য। এই পাড়ায় একটা ধর্মশালায় প্রায় দুই মাস ধরে কাজ চলে। যদি জায়গার পরিসর গত সমস্যা আছে। আশুতোষ শীর প্রাথমিক ভাবে মডেল উপস্থাপনের মাধ্যমের কর্মকান্ডের রূপদান করেন। তারপর গ্রামবাংলার মানুষজন ধীরে সাজিয়ে তোলেন এই অবাঙালি পাড়ার মন্ডপ।
আমাদের কলকাতা শহর বারে বারেই দুর্গা পুজোকে ঘিরে উৎসব মুখর ভাবে বঙ্গজীবনকে বিশ্বের উজ্জ্বল নক্ষত্র রূপে তুলে ধরে। সেখানে মেঘে ঢাকা তারার মাঝে শারদ উৎসব উজ্জ্বল নক্ষত্র।
Discussion about this post