‘পট’ কথাটির আভিধানিক অর্থ হল চিত্র। লোকশিল্পের একটি অতিপ্রাচীন ধারা হল পট। কাপড়ের উপর কাদামাটি কিংবা গোবরের প্রলেপ দিয়ে জমিন তৈরি করে পট আঁকা হত। ওই পট নিয়ে শিল্পী গান গাইতেন। বাংলার জেলায় জেলায় ছড়িয়ে নানা প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী শিল্প। সেই সব অসাধারণ সৃষ্টি বিশ্বের কাছে সমাদৃত হলেও, অর্থাভাবে, চাহিদার অভাবে, হারিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। তেমনই বাংলার পটচিত্র শিল্প। অতিমারী কেড়ে নিয়েছে পটশিল্পীদের অনেকেরই রুজি রোজগার । মাথায় হাত পড়েছে ভরতপুর সহ পটশিল্প নির্ভর এলাকার মানুষগুলোর।
বাঁকুড়ার পটশিল্পের জনপ্রিয়তা রাজ্যের পরিধি ছাড়িয়ে সারা দেশেও। পটচিত্রের উপর রাধাকৃষ্ণ লীলা থেকে মনসামঙ্গলের কাহিনি তুলে ধরেন শিল্পীরা। এই শিল্পের এখন দুর্দিন। তাই তাঁদের পাশে দাঁড়াতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। পটের সাথী প্রকল্পের মাধ্যমে প্রাচীন পটশিল্পের পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে দিতে উদ্যোগ নিয়েছে বাঁকুড়া জেলা পুলিশ। পট শিল্পীদের এমনই এক গ্রাম ছাতনা থানার ভরতপুর। বংশ পরম্পরায় পট এঁকে চলেছেন এই গ্রামের পটুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ। পটই তাঁদের জীবন জীবিকার সন্ধান দেয়। তবে কোনও কৃত্রিম রং এর ব্যবহার নেই প্রাচীন এই পটে। বিভিন্ন রং এর পাথর, গাছের ছাল, মাটি থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি হয় রং। তা দিয়েই আঁকা হয় পটচিত্র।
এই পটে আদি সাঁওতাল উপজাতির জন্ম বৃত্তান্ত, আদিবাসী দেব দেবীর কাহিনি, কৃষ্ণলীলা, কৃষ্ণের জন্ম কাহিনী, মনসামঙ্গল, কর্ণ কাহিনি সহ বিভিন্ন ধরনের পৌরাণিক, দেবদেবীর গল্প, মঙ্গলকাব্যের কাহিনি আঁকা হয় বিশেষ এক ধরনের কাগজের উপর। সেই পট নিয়ে গ্রামে গ্রামে গান গেয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করেন পটুয়ার সম্প্রদায়ের চিত্রকরেরা। ভিক্ষার চাল, ডাল, আলু বিভিন্ন শাকসবজি খেয়ে দিনযাপন হয় তাঁদের। কিন্তু অতিমারীকালের পর থেকে সেই ভিক্ষাবৃত্তির যা আয়, তার দিয়ে দু’মুঠো খাবার জোগাড় হয় না। তাই পটুয়াদের ছেলেপুলেরা আজ আর পট আঁকতে চায় না।
চিত্র এবং তথ্য ঋণ – বাংলার হস্তশিল্প
Discussion about this post