বাঙালির প্রধান উৎসব বললে, প্রথমেই মাথায় আসে পয়লা বৈশাখের কথা। পশ্চিমবঙ্গ আর বাংলাদেশ দুই বাংলার মানুষই জাতি ধর্ম নির্বিশেষে পালন করে থাকে এই উৎসব। তবে কিছু ব্যাপারে দুই দেশের বৈসাদৃশ্য দেখা যায়। এই যেমন বাংলাদেশীরা পয়লা কথাটাকে একটু শুদ্ধ ভাবে পহেলা বলে। আবার ইলিশ-পান্তা ছাড়া নাকি তাদের বৈশাখ সম্পূর্ণই হয় না।
বাংলাদেশে পয়লা বৈশাখে পান্তা ইলিশ খাওয়ার রেওয়াজ শুরু হয় ১৯৮৩ সাল থেকে। ঢাকার রমনার বটমূলে এই দিন মঙ্গল শোভাযাত্রা থেকে শুরু করে বৈশাখী মেলা হয় বহু দিন ধরে। সেরকমই পয়লা বৈশাখের আগে কোনো এক চৈত্রের বিকেলের কথা। রমনার বটমূলে চলছে বর্ষবরণের তোড়জোড়। এর মাঝে কয়েকজন সংস্কৃতি কর্মী ভাবতে বসেন পহেলা বৈশাখে জলখাবার কি করবেন। কাজের ব্যস্ততায় ভালো কিছু বানানোর সময় কম আবার এরম উৎসবের দিন ভালো খাওয়াদাওয়া না করলে তো আত্নার শান্তি মিলবে না। তখনই সাংবাদিক বোরহান আহমেদ প্রস্তাব দেন পান্তা ভাতের সাথে ইলিশ মাছ ভাজা খাওয়ার। বলেন গ্রাম বাংলার কৃষক সম্প্রদায়ের নিত্যদিনের খাবার হলো পান্তা। আর ইলিশ মাছের সাথে বাংলাদেশের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে। সকলে ৫ টাকা করে চাঁদা তুলে পুরো ব্যবস্থা করেন। পয়লা বৈশাখের দিন এই মিলিত পদ রমনা রেস্টুরেন্টে বিক্রির উদ্যোগও নেন তারা। আর মুহূর্তেই সবটা বিক্রিও হয়ে যায়।
সম্ভবত: তার পরের বছর বাংলাদেশের চলচ্চিত্র পরিচালক শহিদুল হক খান তার পরিবারের সাথে এই পান্তা ইলিশ খাওয়ার উদ্যোগ নেন। রমনার বটমূলে আবার এই আয়োজন করতে তিনি নিজে পান্তার পোস্টার তৈরি করেন। আর তার পরিবারের সবাই মাছ ভাজা, পেঁয়াজ কাটা, কাঁচা-শুকনো লঙ্কা ভাজা, পান্তা বানানো, মাটির সানকি কেনার মতো বাকি কাজ করেন। ধীরে ধীরে পুরো বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এই রীতি। পরবর্তীতে এর সাথে যোগ হয় বাংলাদেশের অন্যতম পদ হরেক রকমের ভর্তা। মাছ, আলু, টমেটো, কচু, কাঁচাকলা, কালো জিরে, ডিম, ধনেপাতা, লঙ্কা-পেঁয়াজ সহ হরেক রকমের ভর্তার সাথে সেজে ওঠে পান্তা ইলিশের মাটির সানকি। সাথে থাকে কাঁচা-ভাজা পেঁয়াজ আর সরষের তেল। দুপুরের খাবারেও থাকে ভর্তা ভাত আর বিভিন্ন ইলিশের পদ।
তবে গত কয়েক বছর বাংলাদেশে পয়লা বৈশাখের সকালে ইলিশের দেখা মিলছে না। এপ্রিল মাস জাটকা ইলিশের নদী থেকে সমুদ্রে ফিরে যাওয়ার সময়। সেপ্টেম্বর থেকে এপ্রিল মাসে ইলিশ ধরা বেআইনি ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশ সরকার বলেছেন, “ইলিশ মাছই খেতে হবে এমন নিয়ম নেই, তার পরিবর্তে অন্য যে কোনো মাছের ভাজা বা ভর্তা খাওয়া যায়। খিচুড়ি, ভর্তা, ডিম ভাজাও খাওয়া যায়।” বাংলাদেশের জনগণও তাই দেশের প্রধান সম্পদ রক্ষার জন্য সরকারের আদেশই মেনে চলেছেন।
Discussion about this post