রঙের উৎসব দোলের ঠিক আগের দিন সারা ভারতের বিভিন্ন স্থানে অশুভ শক্তিকে পুড়িয়ে শুভ শক্তির উদয়ের অভিপ্রায় নিয়ে করা হয় হোলিকা দহন। তবে, আপনি কি জানেন এই হোলিকা দহনের সূত্রপাত কিন্তু ভারতে নয়। বরং অধুনা পাকিস্তানের একটি ঐতিহ্যবাহী মন্দিরে শুরু হয়েছিল এই হোলিকা দহনের রীতি। পাকিস্তানের মুলতান শহরের বুকে এককালের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু তীর্থস্থান ছিল প্রহ্লাদপুরী মন্দির।
কথিত আছে, এখানেই প্রথমবার হোলিকা দহন উদযাপিত হয়েছিল। এই মন্দিরের ইতিহাস জড়িয়ে আছে ভগবান বিষ্ণুর চতুর্থ অবতার নরসিংহ এবং তাঁর পরম ভক্ত প্রহ্লাদ-এর কাহিনির সঙ্গে। প্রহ্লাদ ছিলেন অসুর রাজা হিরণ্যকশিপু-র পুত্র, যিনি পরম ভক্তিভাবে বিষ্ণুর সাধনা করতেন। কিংবদন্তি অনুসারে, বিষ্ণু নরসিংহরূপ ধারণ করে হিরণ্যকশিপুকে হত্যা করেন এবং প্রহ্লাদ এই পবিত্র ভূমিতে মন্দির নির্মাণ করেন।
এই মন্দির বহু শতাব্দী ধরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য এক পবিত্র তীর্থস্থল ছিল। কিন্তু ইতিহাসের নির্মম ঘাত-প্রতিঘাতে এটি একাধিকবার ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। প্রথমবার ১১শ শতকে মাহমুদ গজনবী এটি ধ্বংস করেন। ১৮৮১ সালে মুলতান দাঙ্গার সময়ও মন্দির ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তীতে হিন্দুরা এটি পুনর্নির্মাণ করলেও ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের পর মন্দিরটি ধীরে ধীরে অবহেলার শিকার হয়।
সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে ১৯৯২ সালে, যখন অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রতিশোধ নিতে একদল উগ্রপন্থী মন্দিরটি সম্পূর্ণ ধ্বংস করে। ধ্বংসস্তূপের উপর আবর্জনার স্তুপ জমতে থাকে, এবং ধীরে ধীরে জমিটি দখল হয়ে যায়। একসময় যেখানে দেবতার পূজা হতো, সেখানে কেবল ধুলো আর ধ্বংসের চিহ্ন পড়ে থাকে।
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে পাকিস্তান সরকার Evacuee Trust Property Board (ETPB)-এর মাধ্যমে মন্দিরটি পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। যদিও এর পেছনে আধ্যাত্মিক চেতনার চেয়ে অর্থনৈতিক স্বার্থই বেশি সক্রিয়, তবে এই প্রচেষ্টা হিন্দুদের মনে এক আশার আলো জ্বেলেছে। যদি সত্যিই পুনর্নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়, তাহলে একদিন হয়তো আবার প্রহ্লাদপুরী মন্দিরে হোলিকা দহন উদযাপনের সুযোগ মিলবে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—এই পুনর্নির্মাণ কি শুধুই পর্যটন উন্নয়নের জন্য, নাকি সত্যিকারের ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রতীক হতে পারবে? সময়ই এর উত্তর দেবে।
Discussion about this post