“গান হোক আরও গান হোক,গান হোক সবাই সমান হোক, আমাদের মন্দিরে আগামী সকালের আজান হোক।” সংবিধান অনুযায়ী আমাদের দেশ গণতান্ত্রিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ। কিন্তু বাস্তবে এই দুই শব্দের অস্তিত্ব কেবল অভিধানেই থেকে গিয়েছে – এই কঠিন সত্যিটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখালো অর্ণবের সদ্য মুক্তি পাওয়া মিউজিক্যাল শর্ট ‘অপবিত্র পবিত্রবা।’ অনবদ্য ক্যামেরার কাজ, কলাকুশলীদের সাবলীল অভিনয়, মানানসই গান এবং সর্বোপরি ছবির স্ক্রিপ্ট যেন আমার আপনার চারপাশে ঘটে চলা রোজনামচাকেই তুলে ধরেছে।
এত হিংসা হানাহানির মধ্যেও আপনি থমকে যেতে বাধ্য ছবির একটি দৃশ্যে যেখানে সংস্কৃত মন্ত্র ‘অপবিত্র পবিত্রবা’র পেছনে একই সঙ্গে ভেসে আসছে আজানের সুর। কিন্তু মন্ত্র আর আজানে বিরোধ না থাকলেও আলি-অনুপমরা প্রাণ হারায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাতেই। অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা, নিরাপত্তা খুঁজতে যেতে হয় স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছে। সাধারণ মানুষ তাকে প্রশ্ন করলে উত্তরে সে বলে “তোমরা শুধু ভোটটাই দিয়ে যাও।” তবে? সাধারণ মানুষের কাছে গণতন্ত্র মানে কি শুধুই ভোটাধিকার? এই প্রশ্নই ছুঁড়ে দিয়েছে ‘অপবিত্র পবিত্রবা’। ফের একবার মনে করিয়েছে, দড়ি ধরে টান মারলে, রাজা খান খান হতে বাধ্য। তাই গণতন্ত্রের অধিকার বুঝে নিতে মানুষকে সবার আগে এক হতে হবে চেতনায়। আর বাকিটা জানতে হলে ‘Arnab & FAGUS’ ইউটিউব চ্যানেলটিতে গিয়ে দেখতে হবে ‘অপবিত্র পবিত্রবা’।
ছবি মুক্তির পর ডেইলি নিউজ রিলের পক্ষ থেকে ‘অপবিত্র পবিত্রবা’র পরিচালক তথা মৌলিক বাংলা সঙ্গীতশিল্পী অর্ণবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হল। জেনে নেওয়া যাক তার প্রতিক্রিয়া।
‘অপবিত্র পবিত্রবা’ মুক্তির বেশ কয়েকঘন্টা অতিক্রান্ত, দর্শকদের মধ্যে কতটা সাড়া পেল এই ছবি?
এখনও পর্যন্ত কোনও নেগেটিভ কমেন্ট পাইনি, বরং মাত্র ১০ মিনিটে সমাজের এই কঠিন সত্যিকে প্রশ্ন হিসেবে ছুঁড়ে দেওয়ার সাহসিকতা বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে৷ এতদিন চায়ের আড্ডায়, বাড়ির ড্রয়িং রুমে এই বিষয়ে আলোচনা হলেও সেগুলিকে প্রকাশ্যে বলতে ভয় পায় মানুষ, কিন্তু ‘অপবিত্র পবিত্রবা’ এই ভাবনাকে বাস্তব করে দেখিয়েছে।
‘অপবিত্র পবিত্রবা’ এই নামকরণের পেছনে আপনার কী ভাবনা কাজ করেছে?
‘অপবিত্র পবিত্রবা’ হল একটা বিষ্ণু দেবের মন্ত্র। সমাজে যখন অপিবত্র কিছু ঘটে, ভুল কিছু ঘটে তার বিনাশ করতেই ব্যবহৃত হয় এই মন্ত্র। তাই আমাদের সমাজে যা কিছু অপবিত্র তাকে পবিত্র করার সময় এসেছে। ছবিতে বিবেক সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি, যে এই মন্ত্র উচ্চারণ করছে। তারপর কী হল সেটা ছবি দেখেই দর্শক জানাবেন।
সারাদেশে যেভাবে বিভেদের রাজনীতি চলছে, সেখানে এই ছবি বানানো কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?
অবশ্যই খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল। করোনা পরিস্থিতির আগে সারা দেশ জুড়েই বেজে উঠেছিল সাম্প্রদায়িকতার দামামা। সেইসময় দিল্লির অস্থির পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই এই ছবি বানানোর সিদ্ধান্ত নিই, যদিও অতিমারীর কারণে কাজ কিছুটা পিছিয়ে যায়। কিন্তু সমসাময়িক পরিস্থিতিতে আজও এই ছবি একই ভাবে প্রাসঙ্গিক।
ছবি তৈরির ক্ষেত্রে কোনো অনুপ্রেরণা? সবশেষে সাধারণ মানুষের জন্য কী বলতে চান?
আমার অত্যন্ত প্রিয় জ্ঞানা দা ওরফে ডঃ সৌমিক দাস যে এই ছবিতে ‘মৃত্যু পরোয়ানা’ গানটির মিক্স মাস্টারিং করেছেন, তার একটি গানের লাইন আমায় গভীরভাবে ভাবিয়েছে। লাইনটি হল, “এদেশের লোক যত লেখাপড়া করবে, সংসদে ভুতগুলো তত ভয়ে মরবে।” তাই সবশেষে জনগণকে একটা কথাই বলতে চাই আমাদের কর্তব্য প্রশ্ন করা, অধিকার বুঝে নেওয়া। আমরা যদি শিক্ষিত হই, চেতনায় এক হই তবে ক্ষমতাসীন দলও ভয় পেতে বাধ্য। কারণ স্বয়ং সত্যজিৎ রায়ও বলে গিয়েছিলেন,”ওরা যত বেশি পড়ে, তত বেশি জানে, তত কম মানে।”
Discussion about this post