প্রমথ চৌধুরী তাঁর ‘বই পড়া’ প্রবন্ধে বলেছেন, “আমার মনে হয়, এ দেশে লাইব্রেরির সার্থকতা হাসপাতালের চাইতে কিছু কম নয়, এবং স্কুলকলেজের চাইতে কিছু বেশি। এ কথা শুনে অনেকে চমকে উঠবেন, কেউ কেউ আবার হেসেও উঠবেন। কিন্তু আমি জানি, আমি রসিকতাও করছি নে, অদ্ভুত কথাও বলছি নে; যদিচ এ বিষয়ে লোকমত যে আমার মতের সমরেখায় চলে না, সে বিষয়ে আমি সম্পূর্ণ সচেতন।’’ বিশ শতকের দ্বিতীয় বা তৃতীয় দশকের কোনো এক সময় প্রমথ চৌধুরী এই প্রবন্ধ লিখেছিলেন। তারপর সময় পেরিয়েছে। আজ একবিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকেও কি লাইব্রেরীকে একই গুরুত্ব কেউ দেবেন? বোধহয় না। সেই নিদর্শনই দেখাচ্ছে ১৭০ বছর পুরনো বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরী।
অবিভক্ত বাংলার কলকাতায় প্রথম ব্রিটিশ সরকার ১৮৩৫ সালে তৈরি করেছিল কলকাতা পাবলিক লাইব্রেরি। এর ১৫ বছর পর ১৮৫০ সালে ‘পাবলিক লাইব্রেরি অ্যাক্ট অব ইংল্যান্ড’ পাস করানো হয়েছিল। ফলে সেই আইন অনুযায়ী উপমহাদেশের বিভিন্নস্থানে স্থাপন করা হয়েছিল অসংখ্য পাবলিক লাইব্রেরি। এই সময়েই ১৮৫৪ সালে বরিশালে এনেক্স ভবনের পাশে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরি। প্রতিষ্ঠার বছর থেকে ১৩১ বছর পরে ১৯৮৫ সালে লাইব্রেরিটি বরিশালের বান্দ রোডে স্থানান্তর করা হয়। ঐতিহ্যবাহী এই পাবলিক লাইব্রেরিটি প্রথমে বিবি পুকুর পাড়ের এনেক্স ভবনে খোলা হয়েছিল। সেই বাড়িটি এখনো বর্তমান। আবার স্থানান্তরিত হয়েছিল যে ভবনে, সেই বাড়িটিও রয়েছে।
বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরীতে আজও কমপক্ষে ১৪ হাজারের বেশি বইয়ের সংগ্রহ রয়েছে। কিন্তু অব্যবস্থাপনায় লাইব্রেরিটি এখন সম্পূর্ণরুপে পরিত্যক্ত। জানা যায়, ১২ বছর আগেও মানুষ বই পড়তে আসতেন, কিন্তু এখন আর কেউ আসে না। দেওয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে জায়গায় জায়গায়। বইয়ের অমূল্য সংগ্রহ পোকার খাদ্য হয়েছে। কিন্তু বই পড়া মানুষের হদিশ নেই। সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হতে বসেছে বইগুলি। শহরের প্রভাবশালী এবং বিশিষ্ট জনের মধ্যে কেউ কেউ লাইব্রেরীকে পুনরূদ্ধারের জন্য চেষ্টা করছেন। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া আর এআইএর যুগে বইয়ের প্রতি কে আগ্রহী হবেন, বলা যায় না!
Discussion about this post