১৮৮৬ সালে যশোরের কালিয়াগ্রাম। সেসময় কালিয়াগ্রাম কে অন্যতম শিক্ষিত গ্রামগুলির একটি বলে মনে করা হত। সেখান থেকে কলকাতা এলেন এক ভদ্রলোক। নাম গিরিশচন্দ্র দাশগুপ্ত। কলেজ স্ট্রীট এলাকায় তিনি খুললেন একটি বইয়ের দোকান। তারপরের ঘটনা ইতিহাস। দুটি বিশ্বযুদ্ধ অতিক্রান্ত হলো, পেরলো ব্রিটিশরাজ। এই দোকান সাক্ষী থাকলো ভারতের স্বাধীনতার। পার হল সত্তর দশকের উত্তাল সময়, নকশালবাড়ি আন্দোলন; এবং শেষমেশ আজ আমরা আছি ডিজিটাল জমানার পিডিএফের যুগে। এত ঝড়ঝাপটা সত্ত্বেও দোকান বন্ধ হয়নি। ১৩৭ বছর পরেও বহাল তবিয়তে রয়েছে কলকাতার সম্ভাব্য প্রাচীনতম বইয়ের দোকান দাশগুপ্ত অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড।
সম্প্রতি দোকানের কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এই দোকানের একাংশ তাঁরা বিনামূল্যের লাইব্রেরীতে পরিণত করবেন। এবছর দুর্গাপুজোর আগেই তাঁরা এই লাইব্রেরী উদ্বোধন করার কথা ভাবছেন। বর্তমান মালিক অরবিন্দ দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, “আজ শিক্ষার চেতনা মফঃস্বল এবং গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রামীণ এলাকা থেকে বইয়ের গ্রাহকের সংখ্যাও বাড়ছে। তাদের অনেকের পক্ষেই আর্থিক কারণে চট করে বই কিনে ফেলা সহজ হয়না। আমাদের এই বিনামূল্যের লাইব্রেরির পরিকল্পনা সেইসব মানুষের সহায়ক হবে বলেই।” এই লাইব্রেরী সোম থেকে শুক্র দুপুর থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। থাকবে আর্কাইভাল সেন্টার। সবটাই জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত, বিনামূল্যে।
দাশগুপ্ত অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের প্রকাশনা সংস্থাও রয়েছে। লাইব্রেরীর পাশাপাশি তাঁরা পুরনো এবং সমসাময়িক লেখকদের বই প্রকাশনাতেও আগ্রহী। লাইব্রেরী ও প্রকাশনার ক্ষেত্রে তাঁরা অনুবাদের উপর বিশেষ জোর দেবেন বলে জানিয়েছেন। যেসব ছাত্রছাত্রীরা ইংরেজী পড়তে পারেনা এবং যারা বাংলা পড়তে পারেনা তাদের সকলের জন্যই এই কর্মসূচী। দীর্ঘ ১৩৭ বছর ধরে দোকানের মালিকানা হাত বদল হয়নি মোটেও। বংশপরম্পরায় চলেছে দোকান, সংগৃহীত হয়েছে বহুমূল্য সব সাহিত্যকর্ম। আজও দোকানে নিয়মিত চারশোর বেশি মানুষের আনাগোনা। ঐতিহ্যমন্ডিত সেই দোকানেই খুলতে চলেছে সাধারন মানুষের জন্য বিনামূল্যের লাইব্রেরী!
Discussion about this post