দরজায় কড়া নাড়ছে বড়দিন। আমাদের কলকাতাও ধীরে ধীরে সেই উৎসব পালনের জন্য সেজে উঠছে আপন মাধুরীতে । আজ কলকাতার বুকে এক প্রাচীন চার্চের দিকে নজর রাখা যাক। আর এন মুখার্জী স্ট্রিটে দাঁড়ানো ওল্ড মিশন চার্চ । তার থেকে ঠিক দু-পা দূরেই লালদিঘি। শোনা যায়, গির্জার লাল দেওয়ালের ছায়া পড়ত দিঘির জলে, সেই থেকেই ‘লালদিঘি’। যদিও, এই নামকরণ নিয়ে মতান্তর আছে। গির্জার লাল দেওয়াল, তাই লাল গির্জা। তবে, কলকাতার পুরোনো মানচিত্রের সাথে আজকের যোজনখানেক দূরত্ব। তাই গির্জার ছায়া আর দিঘিতে পড়ে না। মজার কথা হল, গির্জাটিও আর লাল নেই।
আর্মেনিয়ানদের বলা হত কলকাতা শহরের দাদামশাই। ইংরেজরা আসার ঢের আগে এসেছিল তারা। তাদের তৈরি চার্চই কলকাতার প্রথম চার্চ। তারপর তৈরি হয় এই লাল গির্জা। ১৭৭০ সালে। কলকাতার প্রথম প্রোটেস্ট্যান্ট গির্জা এটাই। জোহান জাকারিয়া কিয়ার্নান্ডার নামের একজন ব্যক্তি নির্মাণ করেছিলেন এই গির্জা। তিনি ছিলেন সুইডিশ লুথেরান মিশনারি। ১৭৪০ সালে তিনি ভারতে এসেছিলেন। রবার্ট ক্লাইভের ডাকে কলকাতায় আসেন ১৭৫৮তে। পলাশির যুদ্ধের পরে। সোসাইটি ফর প্রমোটিং খ্রিস্টান নলেজের হয়ে কাজ করতেন তিনি। ১৭৬৭ সালে নিজের খরচেই গির্জা বানাতে শুরু করেন। তা শেষ হয়, ১৭৭০-এ।
লাল গির্জা নামটি মুখে মুখে প্রচারিত ছিল। আসল নাম কিন্তু ছিল ‘মিশন চার্চ’। পরে সেন্ট জন গির্জা (১৭৮৭) নির্মিত হওয়ার পর এই চার্চের নাম হয়ে পড়ে ‘ওল্ড চার্চ’ বা ‘ওল্ড মিশন চার্চ’। এই গির্জার সঙ্গে একটা ঐতিহাসিক ঘটনা জুড়ে আছে। ১৮৪৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি। বৃহস্পতিবার। সন্ধেবেলা। কলকাতার লাল গির্জায় হাইম গাইছেন এক যুবক। “I sat in darkness, Reason’s eye Was shut, – was closed in me; – I hastened to Eternity O’er Error’s dreadful sea….”
বয়স তার মাত্র উনিশ। সে আর কেউ নয় আমাদের প্রিয় কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। যিনি স্বেচ্ছায় খ্রীস্ট ধর্ম গ্রহণ করেছেন।কলকাতার লাল গির্জার সুউচ্চ থামগুলির সামনে গিয়ে দাঁড়ালে আজও সেদিনের সন্ধ্যার এই দৃশ্যপটকে অনুভব করতে পারে যে কেউ। মানসচোখে দেখেও নিতে পারে মধুসূদনের অবস্থাটা। আসলে কলকাতার মানুষ সব ধর্মের প্রতি চির কাল শ্রদ্ধাশীল। তাই এই গির্জার ইতিহাসের সঙ্গে মানুষের সেবা ধর্মের কাজটাও জুড়ে আছে।
Discussion about this post