কখনো আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা। আবার কখনো মেঘ ফুঁড়ে সোনালি রোদের হাতছানি। হ্যাঁ, বর্ষাকালের যেন অদ্ভুত এক অন্যরকম মায়া রয়েছে। এই সময় ঘুরতে যাওয়ারও আলাদা মজা। এটা ঠিক যে ভ্রমণপ্রিয়রা এই সময় পাহাড় একটু এড়িয়েই চলেন। তাদের কাছে এই সময় সমুদ্র সৈকতের ধারে বসে ভাজা মাছের স্বাদ আস্বাদন করতে করতে ঢেউয়ের উত্তাল রূপ দেখাটাই শ্রেয়। তবে দীঘা পুরী ছেড়ে মানুষ ঝুঁকেছে অফবিট সমুদ্র সৈকতের সন্ধানে। কলকাতার কাছে সেরকমই এক সমুদ্র সৈকতের ঠিকানা হল হরিপুর সি বিচ।
কাঁথি থেকে মাত্র ১০ কিমি দূরে অবস্থিত নির্জনতা এবং সৌন্দর্য্যে ঘেরা এই সমুদ্র সৈকত। অনেকেই জেনে থাকবেন, এখানেই সেই বিখ্যাত পারমাণবিক কেন্দ্র হওয়ার কথা ছিল। তবে তা বাস্তবায়িত হয়নি। যতদূরেই চোখ যাক না কেন, কয়েক কিমি এই সৈকতে জনমানবের দেখা মেলে না। তাই গোটা সৈকত জুড়ে হাজার হাজার লাল কাঁকড়ার ছড়াছড়ি। দাঁড়ালেই মনে হবে লাল চাদর দিয়ে যেন মোড়া গোটা সমুদ্র সৈকতটা। স্থানীয় মৎস্যজীবী ছাড়া তেমন খুব একটা লোকজনের আনাগোনা এখানে নেই। এছাড়া সোনা চিকন বালি, বিঘা জুড়ে সারি সারি ঝাউবন, রং-বেরংয়ের বনফুলের বাহার, মৎস্যজীবীদের ছোটো ডিঙি নৌকা,ঝিনুক ও শামুকের কারুকার্য, ফাঁকা সুদূরবিস্তৃত সৈকতের বেলাভূমি ইত্যাদি সব মিলিয়ে মাতাল করা এক মোহময় পরিবেশ। নির্জনতার পাহাড় ভেদ করে শুধু শোনা যায় সামুদ্রিক হাওয়ার সাঁই সাঁই শব্দ।
কলকাতা থেকে ট্রেনে বা বাসে গেলে কাঁথিতে নামতে হবে। এরপর বাস অথবা অটো করে ১০ কিমি গেলেই জুনপুট। সময় লাগবে ধরুন ৩০মিনিট। জুনপুট থেকে ডানদিকে অটো বা টোটোতে করে ৪-৫কিলোমিটার গেলেই হরিপুর সমুদ্র সৈকত। সময় লাগবে প্রায় ২০মিনিটের মতো। এই সমুদ্র সৈকতের আশেপাশে থাকার জায়গা এখনও গড়ে ওঠেনি। সেজন্য হয়তো নির্জনতা বজায় রয়েছে ষোলো আনা। তবে জুনপুটে থাকা যায়, সেখানে রয়েছে গেস্ট হাউস বা হোমস্টে। এছাড়া হরিপুর বীচ থেকে ৪-৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত বগুড়ান জলপাইতে রয়েছে হোটেল। তাহলে আর দেরি কীসের? আমাদের দৈনন্দিন ব্যস্ততাময় জীবনের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার ঠিকানা এই নির্জন সমুদ্র সৈকতের থেকে ভালো আর কীই বা হতে পারে বলুন!
Discussion about this post