দার্জিলিং তো অনেক ঘুরলেন। উত্তরবঙ্গ মানেই তো শুধু দার্জিলিং নয়, আর পাহাড় মানেই কেবল ট্রেকিং নয়। প্রকৃতির কাছে গিয়ে, তাকে আলতো ছুঁয়ে থাকার মধ্যেও রয়েছে অন্যরকম আনন্দ। তেমন ছুঁয়ে থাকতে গেলে আজ আর দার্জিলিং গেলে চলবে না। মানুষের ভিড়, কোলাহলের বাইরে যেতে হবে। আর সেই সুযোগই আপনি পাবেন কালিম্পংয়ের এই ছোট্ট গ্রামে। এখনও এখানে সেইভাবে মানুষের চেঁচামেচি শোনা যায়নি।
গ্রামের নাম চিসাং। কালিম্পং শহরের কাছেই। আবার ভুটান সীমান্তও এখান থেকে খুব কাছে। ভারতের থেকে ভুটানের সময় আধঘণ্টা এগিয়ে। ফলে চিসাং ভ্যালির সময়ও আধঘণ্টা এগোনো। ফোনের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না বললেই চলে। কিন্তু সেজন্য দুঃখ করার জায়গাই নেই। কারণ আপনি পৌঁছে যাবেন প্রকৃতির আরও খানিকটা কাছে। সিজন বা অফ সিজন; যেকোনো সময়েই চিসাংয়ের সৌন্দর্যই বাড়ে, বৈ কমে না। চিসাং ভ্যালির কোনও এক নাম না জানা পাহাড়ি ঝরনার ধারের ছোট্ট ক্যাফেতে বসে আপনিও লিখে ফেলতে পারেন দুই লাইন, অথবা গেয়ে উঠতে পারেন গান।
চিসাং গ্রাম নিজেই সুন্দর। হেঁটে হেঁটে ঘুরে বেড়াতে দিব্যি লাগবে। মানুষরাও বড় সহজ, মিশুকে। এছাড়া আপনি যেতে পারেন জিরো পয়েন্ট। ভারত ও ভুটানের সীমান্ত। এখান থেকে প্রাণ ভরে দেখবেন ভুটান পাহাড়। এখান থেকে পাওয়া যায় পুরো ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ। দেখা যায় সীমানাখোলা নদী। পৌঁছে যেতে পারেন মূর্তি নদীর পাড়ে, কিংবা ভুটানের গ্রাম তেন্দুতে। দেখবেন ভুটানের মিলিটারি ক্যাম্প এবং চিন-ভুটান সীমান্ত, ডকালাম। ঘুরে আসতে পারেন ডুয়ার্স ও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গা। তোদে, তংতা, রংপো, দলগাঁও, ঝালং, বিন্দু, প্যারেন। পাওয়া যায় দাওয়াইখোলা, জলঢাকার নদীর দেখা।
হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে শিলিগুড়ি বা নিউ জলপাইগুড়ি জংশন। সেখান থেকে চিসাং পৌঁছনোর জন্য সরাসরি গাড়ি ভাড়া পাওয়া যায়। শিলিগুড়ি থেকে শেয়ার গাড়িতে চালসা হয়ে, অন্য গাড়ি করেও চিসাং পৌঁছনো যায়। তবে সরাসরি শেয়ার গাড়ি পাবেন না। সব থেকে কাছের রেল স্টেশন নিউ মাল জংশন। সেখান থেকে চিসাং-এর দূরত্ব প্রায় ৫৫ কিলোমিটার। থাকা-খাওয়ার সমস্যা নেই। জনপ্রতি ১২০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে সুন্দর সাজানো, রুচিশীল হোমস্টের খোঁজ পেয়ে যাবেন। পাহাড়ি এই গ্রামটিতে পা রাখলেই ভাল হয়ে যাবে আপনার মন।
চিত্রঋণঃ অঙ্কণ চট্টোপাধ্যায়
Discussion about this post