‘পাহাড়’, মানেই বাঙালি ধরেই নিয়েছে দার্জিলিং অথবা সিকিম। বাজেট একটু বেশি হলে হিমাচল বা উত্তরাখন্ড। কিন্তু এর বাইরেও জঙ্গল আর পাহাড়ের ছোঁয়া যে রয়েছে খুব কাছেই, ঠিক আমাদের পাশের রাজ্যেই, তার খবর পরিবেশপ্রেমী বা যথার্থ ভ্রমণপিপাসু মানুষ ছাড়া, আমরা খুব একটা বোধহয় রাখিনা। দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ, পাহাড়ি বাঁকের ওই রোমাঞ্চ, নিরিবিলিতে পশুপাখির ডাক, ঝর্ণা, নদী, অন্যরকম মানুষ ও সংস্কৃতি সবই পেয়ে যাবেন ঠিক পাশের রাজ্যটিতেই। কথা হচ্ছে, ওড়িশার দামনজোড়ি জায়গাটি নিয়ে।
ছোটবেলায় জেনারেল নলেজের বইতে ‘দামনজোড়ি’ নামটা ছিল। তবে, এ নাম স্মৃতির কোঠায় খোদাই করে থাকার কথা নয়, যদি না খনিজ পদার্থ নিয়ে কারো কাজকম্ম থাকে। কেন? কারণ, দামনজোড়ি এলুমিনিয়াম উৎপাদনের জন্যই বিখ্যাত। বক্সাইট, লাইমস্টোন, জেমস্টোনের মত আকরিকও মেলে এখানে। দক্ষিণ ওড়িশার এই পার্বত্য জেলা হল কোরাপুট। এই কোরাপুটের একটি অঞ্চল হল দামনজোড়ি। পূর্বঘাট পর্বতমালার অংশ এই জেলা। ওড়িশার সর্বোচ্চ পাহাড় দেওমালি রয়েছে এখানে। যার উচ্চতা প্রায় ৫৫০০ ফিট। এখান থেকে চাইলে ঘুরে আসা যায় অন্ধ্রপ্রদেশের ভাইজাগ বা আরাকু; কিংবা ছত্তিসগড়ের কিছু অঞ্চলও।
ওড়িশার বিভিন্ন উপজাতির বাসভূমি এই অঞ্চল। অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি এই অঞ্চলের প্রধান আকর্ষণ শবরদের জগন্নাথ মন্দির এবং ভারতের উচ্চতম হনুমান মূর্তি। ঐতিহাসিকভাবে শবর জাতি ছিল ওড়িশার রাজা। ১২০০ শতকে শবররা নির্মাণ করেছিল জগন্নাথ মন্দির। তবে বর্তমান মন্দিরের বয়স কম। ১৯৭২ সালে নির্মিত এই মন্দিরের স্থান পুরীর মন্দিরের পরেই। এখানে আছে ট্রাইবাল মিউজিয়াম। রয়েছে ডুডুমার জলপ্রপাত, কোলাব ড্যাম, গুপ্তেশ্বর গুহা, মাছকুন্ড জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। এছাড়া কোরাপুটে রয়েছে ভারতের অন্যতম আদিম উপজাতি বোন্ডাদের বাস। বহুদিন তারা লোকচক্ষুর আড়ালে ছিল ঠিক, আন্দামানের জারোয়াদের মত।
হাওড়া থেকে একটি মাত্র ট্রেন, যা কোরাপুট বা দামনজোড়ি যায়। সেটি হল সম্বলেশ্বরী এক্সপ্রেস। এই ট্রেন অবশ্য প্রতিদিনই ছাড়ে রাত দশটা কুড়িতে। কোরাপুটের ঠিক আগের স্টেশনটিই হল দামনজোড়ি। রাত্রিবেলা হাওড়া থেকে ছেড়ে এটি দামনজোড়িতে পৌঁছয় পরদিন সন্ধ্যে ছটা পনেরো নাগাদ। হাতে সময় থাকলে গাড়িতেও চলে যেতে পারেন, যাত্রাপথের আনন্দগানকে আরও ভালবভাবে উপভোগ করতে পারবেন। আর অন্ধ্রপ্রদেশ, ছত্তিশগড় আর ওড়িশা এই তিন রাজ্যের মধ্য দিয়েই ড্রাইভ করে যাওয়ার মজাও অন্যরকম। শীতের আমেজের মধ্যেই তাই বেড়িয়ে পরুন!
Discussion about this post