মন ভাঙনের কান্না ভুলে, চোখে লাল স্বপ্ন আর হার না মানা বেপরোয়া প্রেম যার জীবনীশক্তি। সেই তো পারে সমাজের চিরাচরিত তাসের ঘর ভেঙ্গে, স্বপ্নের রামধনু রঙে সেজে উঠতে। যার প্রতিবাদী ঠোঁট চিৎকার করে বলতে পারে, হ্যাঁ আমি সমকামী…! যার ধারালো কলম প্রতি মুহূর্তে ফুঁড়ে দেয় ধর্ষকামী মানসিকতার চোখ। সেই তো অভিষেক কর! আজ্ঞে হ্যাঁ, অভিষেক করের সঙ্গে এমনই এক প্রাণখোলা আলাপচারিতার সাক্ষী ছিলাম আমরা। আসুন এবার মুহূর্তগুলো পড়ে নেওয়া যাক…
কলমের সঙ্গে আপনার রিলেশনশিপ শুরু কী করে হল?
এক্ষেত্রে একটু শুরু থেকে বলি, আমাদের স্কুলে প্রতি বছর বিচিত্রানুষ্ঠান হতো। আমি যদিও কোনো কিছুতেই অংশগ্রহণ করতাম না। আমি যখন দশম শ্রেণী, হঠাৎ মনে হলো আমিও কিছু করি। ঠিক করলাম আবৃত্তি করবো। যদিও অন্যের লেখা কবিতা মুখস্থ করে পাঠ করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই নিজেই লিখে ফেললাম একটি কবিতা, তার নাম দিয়ে ছিলাম “দ্বীপ জ্বেলে যাই।” কবিতাটি পণ প্রথার বিরুদ্ধে লেখা একটি কবিতা। সেই সময়ে স্কুলে কোনো ভাবেই বলা যেত না যে নিজের লেখা কবিতা, অগত্যা অপরিচিত কবির নামেই কবিতা পাঠ ও প্রথম স্থান অর্জন করে বিজয়ী হওয়া। তারপর আর সেরকম ভাবে লেখা লেখিটা হয়ে ওঠেনি টুক টাক শায়েরী ছাড়া। ২০১৩ সালে একটি অসম্ভব বাজে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। মারধোর থেকে শুরু করে মানসিক নির্যাতন কোনোটাই বাদের তালিকায় ছিল না। বড়ো বড়ো চাদর দলা পাকিয়ে মুখের ভিতর ঢুকিয়ে রাখতাম পাছে কান্নার আওয়াজ না কেউ শুনে ফেলে সেই ভয়ে। সেই কষ্টই হয়তো আমাকে কলমটা শক্ত করে ধরতে শিখিয়েছিল। তখন থেকেই আমার লেখালেখির সঙ্গে সম্পর্কটা দৃঢ় হয়। যদিও আমি তখন বাংরেজী লিখতাম কারণ আমি ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করে অনভ্যস্ত। তাই আমার বাংলাটা ভালো হলেও বাংলায় লেখালেখির ক্ষেত্রে তেমন সাবলীল ছিলাম না। তারপর হঠাৎ একদিন নন্দন চত্বরে জয়ন্ত দা ও নীলাঞ্জনা দি’র সঙ্গে আলাপ, তারা এখন ভিনদেশী। নীলাঞ্জনা দি’ই প্রথম আমাকে বাংলা অক্ষরে লেখার উৎসাহ দেন। উনি বলেন ” অভি যে নিজের মাতৃভাষাকে সন্মান করতে জানেনা সে কোনো ভাষাকেই সম্মান করতে জানেনা, হোক ভুল বানান, তাও লেখ বাংলায়।” ব্যাস, তারপর থেকেই পথ চলা শুরু, ২০১৪-তে লাফালাফিতে যোগ দেওয়া, আজ ২০২১, কলম আজও সচল।
লেখালেখির ক্ষেত্রে ট্রেন্ড ফলো করা নাকি বহুমুখীনতা, কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ আপনার চোখে এবং কেন?
আমি মনে করি একজন লেখক বা কবি হিসেবে সমাজের প্রতি তার দায়বদ্ধতা রয়েছে। তাই ট্রেন্ড ফলো করা বলতে আমি বুঝি কোনো সমসাময়িক ঘটনাকে তুলে ধরা, যেমন কোথাও ধর্ষণ হয়েছে, তার প্রতিবাদে একটি লেখা। অথবা কোথাও ধর্ম নিয়ে হানাহানি হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে একটি লেখা। তার মানেই এই নয় যে চারপাশে প্রতিদিন ঘটে যাওয়া সব কিছু নিয়েই নিউজ পেপারের আর্টিকেলের মতো করে লেখা, সেটাকে সাংবাদিকতা বলে। আর সেটা লেখার জন্য তো আমাদের সাংবাদিক বন্ধুরা রয়েছেনই। একজন লেখক আর সাংবাদিকের মধ্যে কিছু তো পার্থক্য রয়েছে। আমার চোখে কবি তো সেই যে প্রচন্ড কান্নার, ভয়ানক ঝড়ের সময়ও শীত-বসন্তের কথা লিখতে পারে। আমি মনে করি একজন লেখককে সব দিক ব্যালান্স করেই চলা উচিত। ট্রেন্ড ফলো করার নামে নেট ঘেঁটে একজন অচেনা অজানা ব্যক্তির জন্মদিন নিয়েও যেমন লিখব না ঠিক তেমনি আমি যাকে ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি সেই ব্যক্তির জন্মদিন উপলক্ষ্যে আমি অবশ্যই লিখব।
সমকামী আর সমপ্রেমীর মধ্যে পার্থক্যটা ঠিক কোথায়? কোনটা সঠিক আপনার বিচারে?
আমার কাছে সমকামী আর সমপ্রেমী এর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। তবু অনেকেই আছেন যারা সমকামী কথাটার মধ্যে দিয়ে যৌনতার ঘন্ধপান। আমি কখনই নিজেকে সমপ্রেমী তকমা লাগিয়ে উচুঁ দরে তুলে দিয়ে, যারা নিজেদের সমকামী বলে পরিচয় দেন তাদের ছোটো করতে পারবো না। দিন শেষে আমরা সবাই মানুষ। সমপ্রেমী কথাটা শুনতে ভালো লাগে তাই অনেকেই সেটা ব্যাবহার করেন। আমরা যারা সমকামী, একজন সমলিঙ্গ মানুষের সাথে প্রেম করি। এটাই বাস্তব।
আগামী দিনে সেক্স চেঞ্জ করার পরিকল্পনা রয়েছে?
না, আপাতত এরকম কোনো ইচ্ছে নেই। আমি আমার শারীরিক গঠন নিয়ে যথেষ্টই খুশি এবং আমার যারা প্রাক্তন প্রেমিক রয়েছেন তাদেরও আমার শারীরিক গঠন নিয়ে কোনো অভিযোগ ছিল না। তারা তাদের নিজস্ব সামাজিক চিন্তাধারা থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারেনি বলে আমাকে স্বীকৃতি দিতে পারেনি। তারা কখনও বলেননি যে আমাকে নিয়ে বিছানায় তাদের অন্য কোনো অসুবিধা হয়েছে বা আমার নিজেরও কখনও হয়নি। তাই আমার যা আছে তাতেই আমি হ্যাপি। আমার যে একটি পুরুষাঙ্গ রয়েছে সেটা নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই। আর তাছাড়া প্রকৃতির বিরুদ্ধে গিয়ে কারি কারি টাকা খরচ করে শারীরিক হেনস্থা করতে আমি চাই না। সেই টাকা দিয়ে বরং কিছু ভালো ভালো জামা কিনতে পারবো, আরো বেশি করে সাজতে পারবো। যারা লিঙ্গ পরিবর্তন করেন আমি কিন্তু তাদের উদ্দ্যেশ্য করে কিছু বলছি না। তারা নিজেদের শারীরিক গঠনে খুশি নন তাই করেন, অবশ্যই সেটা তাদের স্বাধীনতা। আমি আমার শারীরিক গঠন নিয়ে খুশি তাই এই মুহুর্তে সেটা করার কোনো ইচ্ছে নেই। তবে আগামী দিনে কি করবো সেটা জানি না কিন্তু যদি করি তো সেটা নিজের জন্য করবো অন্য কারো জন্য নয়।
মাতৃত্বের স্বাদ কি শুধু সন্তান উৎপাদনের মধ্যে দিয়েই সম্ভব? শিল্প সৃষ্টির মাধ্যমে নয় কি?
শিল্প সৃষ্টির মাধ্যমে মাতৃত্বের স্বাদ পাওয়া যায় কিনা তা আমার জানা নেই। তবে এটা বলতে পারি যে, জন্ম দিলেই যেমন মা হওয়া যায় না ঠিক তেমনি জন্ম না দিয়েও কিন্তু মা হওয়া যায়। এই প্রসঙ্গে বলি, আমার মায়ের মাসি কিন্তু অবিবাহিত ছিলেন, আমার দিদা যখন সারাদিন কাজ করতেন তখন কিন্তু ওই দিদার বোনই মায়েদের সামলাতেন। আমার মা’রা কিন্তু তাকেও মা বলেই ডাকতেন। তিনিও তো সন্তান জন্ম দেননি, তা বলে কি তিনি মা নন? অনেক দিন আগের দুটি ঘটনার কথা মনে মনে পড়ছে, প্রথম ঘটনাটি সম্ভবত পুরুলিয়ার। যেখানে একজন মা তার তিন মাসের কন্যা সন্তানকে তার নিজের প্রেমিককে ধর্ষণ করতে দিয়েছিল শুধু মাত্র সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখার জন্য। দ্বিতীয় ঘটনাটি হলো পাঞ্জাবের। যখন বাবা আর ভাই মিলে মায়ের সামনে মেয়েকে রেপ করেছিল, অথচ সেই মা সবাইকে সাফাই দিয়েছিল, “তো কেয়া হুয়া, আপনা হি তো ঘরকা ক্ষেতি হ্যায়।” তাহলে এরাও তো জন্ম দিয়েছে, কিন্তু মা কি হতে পেরেছে? জন্ম দিলেই যদি মা হওয়া যেত তাহলে আর এত বাচ্চারা অনাথ আশ্রমে পড়ে থাকত না। আমাকে যখন আমার সন্তান স্বরূপ ছেলে মেয়েগুলো মাম মাম বলে ডাকে, আমার ভিতরে এমন একটা অদ্ভুত অনুভূতি হয় যা আমি বলে বোঝাতে পারবো না। মায়েরা যেমন তাদের সন্তান প্রেমে করছে জানলে একটা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, আমার সঙ্গেও ঠিক তেমনি আমার সাথেও একবার হয়েছিল যখন আমার এক সন্তান স্বরূপ ছেলে প্রেমে পড়েছিল। সেই মুহূর্ত থেকেই উপলব্ধি করতে শুরু করি হ্যাঁ, এবার হয়ে তো সত্যি সত্যি আমি মা হতে পেরেছি। কাজেই ‘মা’ হওয়া টা আমার কাছে একটা অনুভুতি, সে কেউ সন্তান জন্ম দিক চাই না দিক।
অনেকেই বলেন, “ওহ্ অভিষেক কর.? ওতো ফুটেজ খোর একটা, একটু বেশিই ন্যাকামি করে!” তাদের জন্য কী বলবেন?
আমার ন্যাকামি করতে ভীষণ ভালো লাগে। আমি ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর সিনেমা দেখতে যাই ও ন্যাকামি করে বলেই। যে সিনেমায় ও নেকামি করবে না তা সে যতই ভালো হোক আমি মনে করবো ফ্লপ। যতক্ষণ না ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত কেঁদে নাক থেকে জল বের করে ফেলছে ততক্ষণ আমি মনে করবো না যে সিনেমা হিট। ন্যাকামিটা আমি ছোট বেলা থেকেই করি। ছোটো বেলা বাথরুমে ঢুকে নাচ গান ও করতাম, আমার মা আমার বাবাকে বলেই রাখতেন যে, “তুমি আগে বাথরুমের কাজ গুলো সেরে নাও, তা নাহলে শ্রীদেবী বাথরুমে ঢুকলে আর পরে সুযোগ পাবে না।” তো এটা আমার চিরাচরিত, এটা আমার আদত! আমি প্রেমটাও ন্যাকামি করে করেছি, ঝগড়াটাও ন্যাকামি করে করেছি, এই একটু আগে আমার প্রাক্তনকে দেখেও ন্যাকামি করছিলাম, আপনাদের ইন্টারভিউ দিতে দিতেও ন্যাকামি করছিলাম। আর ফুটেজখোর, কেউ বলুক চাই না বলুক আমি আমার মত কাজ করে যাই। আর ফুটেজটা কারা দেয়? তারা দিচ্ছে বলেই না আমি ফুটেজ পাচ্ছি! ফুটেজ দিয়ে তো আর টাকা আসে না, যদি আসতো তাহলে আমি আরো বেশি করে ফুটেজ খেতাম। আর তারা একটু বলবেন, যারা হিসেব করে রেখেছেন যে আমি কতটা ফুটেজ খেয়েছি। যদি সেটা দিয়ে কোনো ব্যাংকে ভাঙিয়ে টাকা পাওয়া যায়, তাহলে তো ভালোই। আর একটা কথা আপনারা আবার ভাববেন না যে আমি ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে ন্যাকা বলেছি। আমি বলেছি আমি ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর মত। আপনারা যদি আমাকে ন্যাকা বলেন তাহলে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকেও ন্যাকা বলবেন।
এই সময়ে আমার আপনার দেশ এক ফ্যাসিস্ট আগ্রাসনের মধ্যে দাঁড়িয়ে। এই পরিস্থিতিতে অন্ততঃ সাংস্কৃতিকভাবে হলেও মানুষ যৌথবদ্ধ হয়ে উঠতে পারছেন না কেন?
সাংস্কৃতিকভাবে হলেও মানুষ যৌথবদ্ধ হয়ে উঠতে পারছেন না কারণ, আমরা যারা ইন্ডিপেনডেন্ট শিল্পী সে লেখক হোক বা অভিনেতা, তারা হয় তো শুধু মাত্র টাকার বিনিময় তাদের শিল্পটাকে বিক্রি করছেন না। কিন্তু অনেক উচু দরের মানুষ রয়েছেন যাদের কাছে সাংস্কৃতিক কালচার মানেই সেই কালচার টাকে ভাঙিয়ে টাকা উপার্জন করা। আবার অনেক শিল্পীই আছেন যারা প্রতিনিয়ত দল বদল করে রং বদল করছেন। এরপর দেখা যাবে যারা এতদিন ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে বড় বড় মতাদর্শ প্রকাশ করছিলেন তারাই আবার টাকা লোভে ফ্যাসিস্টদের হয়ে গান লিখছেন। এর জন্য বেকারত্বও অনেকটাই দায়ী। আজকে মানুষ অর্থনৈতিক স্থায়িত্ব ও অস্তিত্বের লড়াইটা লড়তে লড়তে কোথাও গিয়ে নিজের মতাদর্শগুলোকে বিক্রি করে ফেলছেন। আজ আপনারা আমার ইন্টারভিউ নিতে এসেছেন ঠিকই, কিন্তু একটা কথা জানিয়ে রাখি এই লেখালেখি দিয়ে কিন্তু আমার পেট ভরে না। আমাকেও একটা চাকরি করতে হয়, আজ এই চাকরিটা না থাকলে হয় তো আমিও আইটি সেলের হয়ে লিখতাম কিংবা এই সেই পরিস্থিতি আসার আগেই মৃত্যুবরণ করতাম।
এখনকার দিনে একজন সফল লেখক হতে গেলে কি প্রতিভাটাই যথেষ্ট, নাকি তার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকাশনী সংস্থাগুলির মন জুগিয়ে চলার মন্ত্রটাও রপ্ত করা জরুরি?
সত্যি কথা বলতে গেলে, বড় বড় প্রকাশনী সংস্থারা আমার সাথে রীতিমত ঝগড়া করে বসে আছে। আমি আমার জন্য চিন্তা করিনা, আমি জানি আমি একটা লেখা দিলে আমি তার সাম্মানিক পেয়ে যাবো। কিন্তু আমার চিন্তা তাদের নিয়ে যারা লেখালেখির জগতে নতুন, যারা এখনও সেভাবে নাম করতে পারেনি। তারাও তো বিভিন্ন প্রকাশনী সংস্থার হয়ে লিখছেন, কিন্তু বিভিন্ন প্রকাশনী সংস্থাগুলো নবাগতদের তাদের যোগ্য সাম্মানিকটুকুও দেন না। আমি তাদের হয়ে প্রতিবাদ করেছিলাম। কারণ প্রকাশনী সংস্থাগুলো তো বই চাপিয়ে কিছু না কিছু উপার্জন করছে, তারা তো আর চ্যারিটি করছে না, তারা যেমন বিভিন্ন লেখকদের পরিচিতি দিচ্ছেন ঠিক তেমনি লেখকদের পরিচিতিতেও তাদের প্রকাশনীর নাম হচ্ছে। আজ প্রকাশনী সংস্থাগুলো মন যুগিয়ে চলিনি বলে আমাকে বাংলা কবিতা উৎসবে আমন্ত্রণ জানানো হয় না। এই কিছুদিন আগে লিটিল ম্যাগ ফেস্টিভ্যালে আমার এক পরিচিত ভাইয়ের প্রচ্ছদও ছেপেছিল তাকে না জানিয়েই, বিনা অনুমতিতে। আমি সেটা নিয়েও প্রতিবাদ করেছিলাম। আমার মতে প্রতিভা থাকা তো অবশ্যই দরকার, তার পাশাপাশি পাঠক তৈরি করাটাও খুব জরুরী। সে তোমার লেখা কেউ পড়ুক চাই না পড়ুক, দেখুক ছাই না দেখুক তুমি লেখা ফেলে রাখো।
সেই ২০১৩ থেকে লেখা শুরু করেছি, এমন একটা সময় গেছে যখন মানুষ আমার লেখা একটা লাইনও পড়েনি। আর আজ এতগুলো মানুষ আমার লেখা পড়ছে। সেটা হয় তো অনেকই সহ্য হচ্ছে না তাই আজকে আমার প্রোফাইলে রিপোর্ট মারা হচ্ছে, প্রোফাইল ব্লক করে রাখা হচ্ছে। আমি জানিনা এগুলো কে বা কারা করছে, কেন করছে. কিন্তু আজকে আমাকে সরিয়ে দিতে পারলে কী লাভ? আরও একজন অভিষেক করের মতো তো কেউ লিখবে না! অনুপ্রেরণায় লিখতে পারে, তবে একজন তসলিমা নাসরিনও কেউ হবেনা, একজন শক্তি চট্টোপাধ্যায়ও কেউ হয়নি আর একজন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ও হবে না। ঠিক তেমনই আর একজন অভিষেক করও কেউ হবে না। তো এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে যারা লিখছেন তাদের সবাইকেই বলব, পাঠক তৈরি করুন। আমার লেখায় লাইক ও শেয়ার হচ্ছে না কেন? ওরটায় হচ্ছে কেন এগুলো ভাবলে হবে না। প্রকাশনী সংস্থাগুলোর মন যুগিয়ে চলতে গেলে তারা আপনাদের প্রোডাক্ট বানিয়ে ফেলবে। আজ আমি এত মানুষের সাথে একসঙ্গে কাজ করছি। কেউ আমাকে নিজেদের প্রোডাক্ট বলে চালায়নি বা আমিও তাদের নিজের প্রোডাক্ট বলে চালাইনি। লাফালাফি থেকে শুরু করে সৌরভ বিশাই, সবাই যে যার কর্ম ক্ষেত্রে একাকী আত্মনির্ভরশীল। তো কারো মন যুগিয়ে চলার কোনও দরকার নেই, সেটা করতে গেলে একটা সময় দম বন্ধ হয়ে আসবে। আর আমার পক্ষে সেটা সম্ভব নয়। আমি আগে ‘বং আনটোল্ড’ এ কবিতা পাঠ করতাম। ওদের সঙ্গে সমস্যা হওয়ায় আমি সেটি ছেড়ে দিই। তা বলে কি ‘বং আনটোল্ড’ বন্ধ হয়ে গিয়েছে নাকি আমার কবিতা পাঠ বন্ধ হয়ে গিয়েছ? উল্টে ‘বং আনটোল্ড’ ছাড়ার পর আমি আরো বড়ো বড়ো মঞ্চ পেয়েছি। ইউটিউবে হয়তো আমার বেশি পাঠক নেই, আমার কাছে ফেসবুকই যথেষ্ট! তাও কিছু মানুষ অর্ধেক সময় আমার ফেসবুক প্রোফাইলে রিপোর্ট মেরে রাখে। কিন্তু তাতে কোনো যায় আসে না আমার, আমি জানি আমি পড়ে গেলে আবার ঠিক উঠে দাঁড়াব। আমি নিজেকে বিশ্বাস করি, অন্য কাউকে ভরসা করি না। আমি যদি ভালো কাজ করি প্রকাশনী নিজেই আসবে আমার কাছে।
Discussion about this post