সুরক্ষার কথা চিন্তা করে ইতিমধ্যেই বাতিল করা হয়েছে উচ্চমাধ্যমিক ও কলেজের ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা। কিন্তু সবার সুরক্ষা যাদের হাতে তাদের সুরক্ষা কোথায়? অর্থাৎ এই তালিকা থেকে বাদ পড়েছে নার্সিং কলেজের নাম। দেশের এরকম অবস্থায় তারা কী করে পরীক্ষা দেবে তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। শুধু তাই নয়, ইতিমধ্যেই ১ জুলাই থেকে নার্সিং শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে জয়েন করতে বলা হয়েছে। উঠে এল এমনও অভিযোগ।
এ প্রসঙ্গে কলকাতার এক নামকরা বেসরকারি নার্সিং স্কুলের বি.এস.সি নার্সিং এর ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী মৌবনী দত্ত (নাম পরিবর্তিত) আমাদের দিলেন বেশ কিছু তথ্য। তাঁর ভাষায়, “লকডাউনের ১৪ দিন আগে আমাদের ইন্টার্নশিপ শুরু হয়। লকডাউন শুরু হওয়ার পরে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা বাড়ি ফিরে আসি। কিন্তু এখন কলেজ থেকে প্রিন্সিপাল আমাদেরকে হাসপাতালে জয়েন করার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। এখনো পর্যন্ত আমাদের ইন্টার্নশিপ কমপ্লিট হয়নি। এরকম একটা পরিস্থিতিতে কাজে জয়েন করলে আমাদের জীবনের ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। আর সেক্ষেত্রেও কলেজ কোনরকম দায়িত্ব নিতে রাজিই নয়। আমাদের ওপর মানসিকভাবে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে যাতে অভিভাবকের কাছ থেকে আমরা চিঠি লিখে নিয়ে আসি যাতে কোন রকমের ক্ষতি হলে তার দায় সম্পূর্ণভাবে আমাদের পরিবারেরই থাকবে। এমনকি আমাদের সুরক্ষার জন্য পিপিই কিট, মাস্ক, গ্লাভস, স্যানিটাইজার সহ সমস্ত কিছুই নিজেদেরকেই কিনতে বলা হচ্ছে। সেক্ষেত্রেও কলেজগুলো কোন রকমের সাহায্য করছে না। ইতিমধ্যেই হাসপাতালের জয়েন করার পরে নার্সিং এর অনেক ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আর সেক্ষেত্রেও কলেজ কোনও রকমের দায়িত্ব নিচ্ছে না। আমাদের অনলাইনে ক্লাস হলেও কোনও সিলেবাসই শেষ করা হয়নি।” এই প্রসঙ্গে অভিমত জানতে আমরা যোগাযোগ করেছিলাম ডিরেক্টর অফ মেডিকেল এডুকেশনের সদস্য দেবাশীষ ভট্টাচার্য্যকে। বরংবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন তোলেননি।
‘ডেইলি নিউজ রিল’ পৌঁছে গিয়েছিল নার্সেস ইউনিটির সহ-সম্পাদিকা সঞ্চিতা সূত্রধরের কাছে। তিনি বলেন,”বেশিরভাগ মেয়েদের বাড়ি অনেক দূরে। এরকম অবস্থায় হাসপাতাল জয়েন করলে তারা কোথায় থাকবে তা নিয়ে নার্সিং স্কুলগুলো বিন্দুমাত্র ভাবছে না। উপযুক্ত হোস্টেলের ব্যবস্থা নেই, থাকলেও তার পরিকাঠামো ব্যবস্থা এতটাই অনুন্নত যে সেখানে থাকার মত পরিস্থিতি নেই। এদিকে ছাত্রীদের হাসপাতালে জয়েন না করলে রেজিস্ট্রেশন বাতিল হবে, এরকম মানসিক চাপও দিচ্ছেন কলেজের প্রিন্সিপালরা।” অন্যদিকে সঞ্চিতার প্রশ্ন, “কোনও রকম সুরক্ষা ছাড়াই এরকম একটা পরিস্থিতির মধ্যে তাদেরকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে কেন? অনলাইন ক্লাস হলেও অধিকাংশ ছাত্রীদের কাছে স্মার্টফোন নেই ফলে তারা ক্লাসে অংশ নিতে পারছে না। এরকম পরিস্থিতিতে যদি তাঁরা মারণ-রোগে আক্রান্ত হন, তার দায় কে নেবে?”
নার্সেস ইউনিটির সভাপতি পার্বতী পাল জানালেন, “নার্সিং স্টুডেন্ট এবং প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত নার্স দুটোর মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে। এই মুহূর্তে ২০১৯ সালের পাস করা ৩০০ জন নার্সিং কর্মচারী বসে রয়েছেন। তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়নি। দেশের এরকম পরিস্থিতিতে তাদেরকে কেন হাসপাতালগুলোতে নিয়োগ করা হচ্ছে না? উল্টে যারা এখনও সম্পূর্ণ রূপে নার্স হয়ে ওঠেননি তাদের ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করে অবৈজ্ঞানিক ভাবে ডাকা হচ্ছে কেন? ইতিমধ্যেই করোনা আক্রান্ত হয়ে উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে দু’জন নার্স মারা গেছেন। নার্সরা অসুস্থ হলে তাদের প্রতি উপযুক্ত যত্ন নেওয়া হচ্ছে না। আর শুরুতেই তাদের যদি এমন মানসিক চাপের পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়, তাহলে আগামী জীবনে যখন তাদের সামনে থেকে লড়াই করার মতো পরিস্থিতি আসবে তখন তারা লড়বেন কী করে?”
ইতিমধ্যেই নার্সেস ইউনিটির তরফে স্বাস্থ্য ভবনে লিখিতভাবে অভিযোগ জানানো হয়েছে। যদিও এখনো পর্যন্ত তার কোনও সদুত্তর পায়নি। সূত্রের খবর, হাসপাতালে জয়েন করার পরে ঘাটালের এক নার্সিং ছাত্রীর শরীরে করোনা পজেটিভ ধরা পড়েছে। কিন্তু এর পরেও কি সত্যিই এতটাই উদাসীন থাকবে স্বাস্থ্য দপ্তর? সেই নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।
Discussion about this post