সকালবেলা চটজলদি সবজি বাজার যেতে চান? কিংবা সন্ধ্যেবেলা চা দিয়ে গরম গরম সিঙ্গারা খাবেন, আনতে হবে পাশের পাড়া থেকেই? এইসব মুহূর্তে আপনার পাড়ার মোড়ে যদি অপেক্ষা করে হেলিকপ্টার? নিমেষের মধ্যে সেটা আপনাকে পৌঁছে দেবে গন্তব্যে! অবাক লাগছে, তাই তো? না, এই হেলিকপ্টার সেই হেলিকপ্টার নয়। ইনি হলেন বাংলাদেশের সাতক্ষীরার বিখ্যাত ‘সাইকেল হেলিকপ্টার’। আজকের বাস, অটো, বাইক বা রিক্সার মত এই সাইকেলও মানুষের বাহনের কাজই করত। কম সময়ে যোগাযোগের মাধ্যম হওয়ার দরুণ মানুষ নাম দিয়েছিল হেলিকপ্টার।
নব্বইয়ের দশকে বড় হওয়া ছেলে-মেয়েরা সকলেই কমবেশি সাইকেল চড়েছে। তবে, সেটা বাবা, কাকার সাইকেল। বেঢপ সেই সাইকেলের পিছনের কেরিয়ারে অথবা সিটের সামনে আলাদা করে লাগিয়ে নেওয়া আরও একটি ছোট সিটে বসতে হত। আর সাইকেলের সামনে বা পিছনের সিটে প্রেমিকাকে বসিয়ে প্রেমিকের যাত্রা তো গল্পে, সিনেমায় আকছার দেখা যায়। কিন্তু, হেলিকপ্টার সাইকেল এসবের ধার ধারেনা। এই সাইকেল ব্যবহার হত সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক কাজের জন্য। রিক্সার মত এই সাইকেলে চড়ে মানুষ যাতায়াত করতেন। সাইকেল চালাতেন একজন নির্দিষ্ট চালক।
দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাওয়ার একমাত্র সহজলভ্য ও জনপ্রিয় পরিবহন একসময় ছিল এই সাইকেল হেলিকপ্টার। সাইকেলের কেরিয়ারে গদি বা নরম কিছু বেঁধে নিলেই তৈরি হয়ে যেত সিট। মূলত একজন মানুষ বহনের ব্যবস্থাই ছিল সাইকেল হেলিকপ্টারে। ১৯৬৮ সালে এই পরিবহন ব্যবস্থাটির সূত্রপাত হয়েছিল। সূত্রপাত হয়েছিল সাতক্ষীরা জেলাতেই। এই অঞ্চলে সাইকেল হেলিকপ্টার অতি দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করার সঙ্গে সঙ্গে দশ হাজারের বেশি মানুষ হেলিকপ্টার চালানোর পেশায় জড়িয়ে পড়েছিলেন। হাটবাজার, গুরুত্বপূর্ণস্থান, রাস্তার মোড়, সর্বত্র হেলিকপ্টার চালকের আনাগোনা ছিল।
বিগত কয়েক দশকে সারা পৃথিবীসহ এই অঞ্চলেও রাস্তাঘাটের উন্নতি হয়েছে, পাশাপাশি উন্নত হয়েছে পরিবহন ব্যবস্থাও। মোটর সাইকেল, বাস, যন্ত্র চালিত রিক্সা বা টোটো, ইঞ্চিন চালিত ভ্যানগাড়ি, অটো প্রভৃতির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এছাড়াও ব্যক্তিগত চারচাকা তো রয়েছেই। আর আজ তো বাড়িতে বসে মোবাইল ফোন টিপলেই বাড়ির দরজায় হাজির হয় মোটরবাইক বা চারচাকা। বলা বাহুল্য এই আধুনিক যুগের যান্ত্রিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রাচীন সাইকেল হেলিকপ্টারের টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব। ফলে সাইকেল হেলিকপ্টার এখন আর দেখা যায়না বললেই চলে। হেলিকপ্টারের চালকেরাও বেছে নিয়েছেন অন্য পেশা। এই অদ্ভুত বাহনটি বেঁচে আছে সাতক্ষীরার মানুষের নস্টালজিয়ায়।
চিত্রঋণ : ইত্তেফাক ডট কম, দৈনিক যশোর এক্সপ্রেস, বাণিজ্য প্রতিদিন
Discussion about this post