একটা সময় এমন ছিল যখন, কামানের গোলা দেগে সূচনা হতো দুর্গা পুজোর। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই প্রথা, অনেকটা বিলোপ পেলেও, এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ঐতিহ্য এখনো ধরে রেখেছেন গ্রামবাসীরা। উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ ব্লকের, উদগ্রামের দুর্গা মন্দিরের দুর্গাপূজা এভাবেই এখনো ৫০০ বছর পুরনো ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। বহু প্রাচীন এই দুর্গাপুজোর একটা বিশাল ইতিহাস রয়েছে। চলুন তাহলে আজ এই দুর্গাপুজোর ইতিহাসটাই জেনে নেওয়া যাক।
কথিত আছে, অবিভক্ত বঙ্গের দিনাজপুর জেলার রাধিকাপুরের জমিদার জগদীশচন্দ্র রায় বাহাদুর এই দুর্গা পুজোর সূচনা করেছিলেন। সেই সময় কামানের গোলা দেগে দুর্গা পুজো শুরু করা হতো। বাংলা ভাগ হয়ে যাওয়ার পরে, অনেকেই ওপার বাংলায় চলে যান, আবার অনেকে এবার বাংলায় থেকে যান। ফলে, এই পুজোর উৎসাহ অনেকটাই কমে যায়। সেই প্রথা এখন পুরোপুরিভাবে বিলোপ পেয়েছে, তবে স্থানীয়রা এখনো পুজোর কিছু নিয়ম মেনে পুজো চালিয়ে যাচ্ছেন।
এখন আর কামান দাগার রীতি হয়তো নেই, তবে এই গ্রামে পুরনো কাঠামো দিয়ে এখনো দুর্গা পুজো করা হয়। জন্মাষ্টমীতে এই গ্রামে দুর্গা মন্দিরের প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। পরে কাঠামো জল থেকে তুলে এনে, রেখে দিয়ে শুকিয়ে, তারপর আবার তাতে মাটির প্রলেপ দিয়ে তৈরি করা হয় দুর্গা প্রতিমা। ৫০০ বছর আগেও এরকমই একটা নিয়ম ছিল সেখানে। এর পাশাপাশি, এই গ্রামে চারদিন মুখোশ নাচের এবং চন্ডীপাঠের বিশেষ ব্যবস্থা ছিল পুজোর সময়। মূলত গ্রামবাসীদের অশুভ শক্তির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য, এই প্রথা চালু করা হয়েছিল।
নিয়ম মেনে এখনো সেই প্রথা মেনে মুখোশ নাচ এবং চন্ডীপাঠ করা হয়। গ্রামবাসীরা বিশ্বাস করেন, এই দুর্গা মন্দিরটি অত্যন্ত জাগ্রত। গ্রামের কোন মেয়ের বিয়ে হলে, সবার আগে দূর্গা মন্দিরে এসে দেবী দুর্গাকে প্রণাম করা হয়। তেমনি গ্রামের কোন নববধূ এলে, দেবী দুর্গাকে প্রণাম করে তারপর এই শ্বশুর বাড়িতে প্রবেশ করেন সেই বধূ। গ্রামবাসীরা জানান, এই মন্দিরের বেশ কিছু জমি রয়েছে যেখানে চাষবাস করে, ফসল বিক্রি করে যে টাকা ওঠে, সেই দিয়েই মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণ এবং পূজোর খরচ বহন করা হয়। আর এভাবেই দীর্ঘ ৫০০ বছর ধরে আলোচনার আড়ালে থেকেই নিজেদের প্রথাকে মেনে চলেছেন অধুনা উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জের এই উদগ্রাম এলাকার বাসিন্দারা।
Discussion about this post