ভাগীরথীর পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত বর্ধমান জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর কালনা। বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী প্রাচীন এই শহরটি। টেরাকোটার তৈরী অপূর্ব স্থাপত্যগুলির জন্য ইতিহাস প্রেমী পর্যটকদের কাছে অন্যতম ডেস্টিনেশন কালনা। বহু সংখ্যক মন্দিরের অবস্থানের কারণে ‘মন্দিরের শহর’ নামেও পরিচিত কালনা। আর এবার কালনার মুকুটে জুড়তে চলেছে আরো একটি পালক। কালনা মহকুমার পরবর্তী পাখিরালয় হয়ে ওঠার দিকে এগিয়ে চলেছে কালনার ছাড়িগঙ্গা।
কালনা শহর থেকে হাটকালনা পঞ্চায়েতের একাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত কালনার ছাড়িগঙ্গা। এতদিন এই ছাড়িগঙ্গায় বক, মাছারাঙাদের মত পাখিদেরই ভিড় ছিল। তবে এই প্রথম ডিসেম্বরের শুরুতে ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখির দল দখল নিয়েছে কালনার ছাড়িগঙ্গার। ভোর হতেই ঘুরে ঘুরে জলে নামা, ভেসে বেড়ানো, দল বেঁধে উড়তে দেখা যাচ্ছে তাদেরই। মহকুমাশাসক (কালনা) সুরেশকুমার জগৎ জানিয়েছেন, “ছাড়িগঙ্গায় পরিযায়ী পাখিদের আসার বিবরণ দিয়ে তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে জেলা বনাধিকারিককে চিঠি পাঠানো হচ্ছে।” পক্ষী বিশেষজ্ঞদের মতে, এবছর জলাশয়ে এসেছে গ্রে হেডেড শ্যাম্পেন, কটনটিল, পারপেল শ্যাম্পেন, ব্রোঞ্চ উইন জাকানা, লেসার হুইসেলিং ডার্ক, কমনকুট, ওপেন বিল স্টক, পন্ড হেরন, গ্রিন বি ইটার-সহ অন্তত ১৫টি প্রজাতির পাখি। মহকুমার প্রথম পাখিরালয় পূর্বস্থলীর চুপি। প্রতিবছর বহু প্রজাতির পরিযায়ী পাখিরা ভিড় জমাতো চুপি চরে। কিন্তু এ বছর চুপি চড় নয়, পথ বদলে পরিযায়ী পাখিদের নতুন বাসস্থান কালনার ছাড়িগঙ্গা।
বন দফতরের আধিকারিকদের মতে, “কোলাহল নেই এমন জায়গা পছন্দ করে পরিযায়ীরা। পূর্বস্থলীর চুপিতে নৌকার দাপাদাপি, পাখিদের ছবি তোলার জন্য ড্রোন ব্যবহার, পিকনিক করতে আসা দলের কোলাহলে পাখিরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করেই কালনার ছাড়িগঙ্গাকে নিজেদের নতুন ঘর হিসেবে বেছে নিয়েছেন। ছাড়িগঙ্গায় প্রচুর কচুরিপানাও রয়েছে। ফলে খাবার সংগ্রহ এবং ডিম পাড়তে পাখিদের অসুবিধা হচ্ছে না। বন দফতরের কাটোয়ার রেঞ্জ অফিসার শিবপ্রসাদ সিংহ জানান,” জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে পক্ষী গণনা হবে। এ বার কালনার ছাড়িগঙ্গাকে এই প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।”
শহরের পক্ষীপ্রেমীদের মতে, “যে পরিমাণ নতুন প্রজাতির পাখি এসেছে, তাতে আরও একটি পাখিরালয় তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে উদ্যোগী হতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে পাখিরা যেন এই অঞ্চলটিকে নিরাপদ মনে করেন।” প্রথম এই জলাশয়ে পরিযায়ী পাখিদের আসা শুরু হওয়ায় খুশি এলাকার বাসিন্দারা। শহরবাসীর দাবি, এখানকার ঐতিহাসিক স্থাপত্যগুলি দেখতে সারাবছর বহু পর্যটক আসেন। তবে পাখিরালয় গড়ে উঠলে এই শহরের ঐতিহ্য ও আকর্ষণ আরও বাড়বে।
Discussion about this post