বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার মহাদেবপুরের শিকারপুর গ্রামের সহায় সম্বলহীন ভিক্ষুক গহের আলী। মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভিক্ষা করেই পেটের ভাত টুকু জোগাড় করতেন। গ্রামের মেঠো রাস্তায় প্রখর রোদে হাঁটতে হাঁটতে যখন তিনি হাঁফিয়ে উঠতেন তখন এক বাবলা গাছের ছায়ায় বসে বিশ্রাম নিতেন। রাস্তাটি ছিল বেশ দীর্ঘ। অথচ সেখানে বাবলা গাছ ছিল মাত্র একটি। এই দীর্ঘ রাস্তা পার হতে তাঁর অনেক কষ্ট হতো। একদিন তিনি ভাবলেন, রাস্তার দু’ধারে গাছ লাগালে কেমন হয়? কিন্তু গাছের চারা কিনবেন কী দিয়ে, হাতে কোন টাকা নেই!
মনটা মুষড়ে পড়ল তাঁর। তবে স্বপ্নটা জিইয়ে রইলো মনে। এরপর ভিক্ষা করতে গিয়ে এক বাড়িতে দেখলেন উঠোনে কয়েকটা তালের আঁটি। তখন ভিক্ষার সঙ্গে সেই তালের আঠিও তিনি চেয়ে নিলেন। ফেরার পথে রাস্তার ধারে বীজগুলো রোপন করলেন। এরপর থেকে যখন যে বাড়িতে যেতেন সেখানে ভিক্ষার পাশাপাশি তালের আঁটির খোঁজ করতেন এবং পেয়ে গেলে তা রাস্তার ধারে পুঁতে বাড়ি ফিরতেন। এভাবেই কেটে গেল অনেক বছর।
এক সময় দেখা গেল রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের বলিহার সেতু থেকে নারায়ণপুর সেতু পর্যন্ত দুই কিলোমিটার রাস্তার পাশে এবং এলাকার বিভিন্ন জায়গায় বেড়ে উঠেছে ৩০ হাজার তাল গাছ। ভিক্ষুক গহের আলী আজ বেঁচে নেই! কিন্তু তাঁর লাগানো তাল গাছগুলো আজও ছায়া দিয়ে পথিকের ক্লান্তি দূর করে চলেছে।
Discussion about this post