ভালোবাসা মানুষের একটি সহজাত প্রবৃত্তি। এই আবেগ প্রকাশের না কোনো নির্দিষ্ট দিন হয়, আর না কোনো বেড়াজাল। তবু আমাদের কাছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের আরেক নাম ১৪ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ ভ্যালেন্টাইনস ডে। এদিনের প্রেম বলুন বা ভালোবাসাই বলুন, সেই উদযাপন তো রয়েছে বটেই। সঙ্গে প্রথাগত সামাজিক স্রোতের বিপরীতে গিয়ে একটু অন্যরকম উদযাপনের শরিক থাকলে কেমন হয়? যেমন ধরুন জ্ঞান আর ভালোবাসা দুই-ই যত ছড়িয়ে দেওয়া যায় ততই বাড়ে বই কমে না। এই বিশ্বাসের ওপর ভর করেই নড়িদানা স্বপ্নসন্ধান সংস্থার ব্যতিক্রমী এক পদক্ষেপ ভালোবাসার হাট। যেখানে ভালোবাসা শুধুমাত্র দু’জন মানুষের মধ্যেই নয়, সামাজিক ক্ষেত্রে বহু মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়াই এক এবং একমাত্র সারকথা।
এই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা তথা সম্পাদক সুমিত মন্ডল। ২০১৪ সাল থেকে এই সংস্থার উদ্যোগেই ব্যক্তিপ্রেমকে সমষ্টির স্বার্থে ছড়িয়ে দিতে ভালোবাসার হাটের পথ চলা শুরু হয়েছিল। এবছরেও তাই ১৪ ফেব্রুয়ারি উদযাপিত হয়েছে এই অনুষ্ঠান। ভালোবাসার এই সম্প্রসারণ ঘটানোর মূল ভাবনা হল উদ্বৃত্ত সহযোগ। সোজা করে বলা যাক। মানুষের উদ্বৃত্ত কিছু জিনিসপত্র যেমন জামাকাপড় থেকে শুরু করে বই, খাতা, পেন, গ্লোব ইত্যাদি নানা কিছু আদতে যাদের প্রয়োজন তাদের হাতে ভালোবাসার দিনে তুলে দেন তারা। সুমিত বাবুর কথায় “ভালোবাসার হাট হল বিনে পয়সার বাজার। যাদের কাছে এসব জিনিসের প্রয়োজন নেই তারা এই হাটে দিয়ে থাকেন এবং যাদের প্রয়োজন আছে তারা এগুলো নিয়ে থাকেন। এটিই হল এই হাটের মূল উপজীব্য বিষয়।” এছাড়াও স্বাস্থ্য শিবিরেরও আয়োজন করে থাকেন তারা। এ বছরও হয়নি তার অন্যথা।
শুধু ১৪ ফেব্রুয়ারি নয়! বছরের বিভিন্ন সময়ে রক্তদান শিবিরের আয়োজন, বিনা পয়সায় ছাত্র ছাত্রীদের পড়ানো এমনকি অনেকে স্বেচ্ছায় বিনামূল্যে পড়ুয়াদের নাচ গান শেখানোর দায়িত্ব নিয়ে থাকেন। নড়িদানা সংস্থার নতুন এক উদ্যোগ, যার কাজ বেশ অনেকটাই এগিয়েছে তা হল একটি লাইব্রেরী গঠন। এখানেও তাদের অভিনব এক ভাবনা তা হল একটি গোলাপের দামের সমান একটি ইটের দাম ও তার সমান হল ১০ টাকা। জনসাধারণের দেওয়া সেই দশ টাকাই লাইব্রেরী নির্মাণের কাজে লাগাচ্ছেন তারা। এভাবেই চলছে তাদের সামান্যে অসামান্য নির্মাণ। প্রতিবছরের মত এবছরের এই বিশেষ দিনে স্বপ্নদ্বীপের বাগানবাড়িতে আয়োজিত হয়েছে ভালোবাসার হাট। মানুষের পাশে থাকার অঙ্গীকার নিয়ে তাই সকলের প্রানবন্ত ও স্বতস্ফূর্ত উপস্থিতিতে আপ্লুত হয়েছেন নড়িদানা সংস্থার প্রত্যেক সদস্য।
Discussion about this post