প্রতিটি বনেদি বাড়ি প্রায়শই শতাব্দী প্রাচীন। এখনও এই বাড়িগুলি তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য, রীতিনীতি এবং পুরানো সময়ের স্মৃতি বহন করে চলেছে। বিভিন্ন বনেদি বাড়ির সাবেকি পুজো ছাড়া দুর্গাপুজোর ইতিহাস একেবারেই অসম্পূর্ণ। যুগ যুগ ধরে বংশ পরম্পরায় যা চলে আসছে প্রতি বছর। তেমনই প্রায় ৩৫০ থেকে ৪০০ বছরের প্রাচীন নন্দকুমারের ব্যবত্তারহাটের ব্যবত্তাবাটির দুর্গাপুজো। এই পুজো প্রচলনের এক চমকপ্রদ ইতিহাসও রয়েছে।
মায়ের চোখের জল মোছাতে এই পুজো শুরু করেছিলেন স্বার্থকরাম। স্বার্থকরাম ছিলেন তমলুকের তাম্রধ্বজ রাজার ব্যবস্থাপক। তাঁর মা পাশের গ্রামে দুর্গাপুজোয় অজ্ঞলি দিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর মাকে ভিখারি বামুনের বউ বলে অপমান করে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর তাঁর মা কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরে আসেন। মায়ের চোখের জল দেখে নিজেকে স্থির রাখতে পারেননি স্বার্থকরাম। মায়ের চোখের জল মোছাতে বাড়িতেই চিন্ময়ী মায়ের পুজোর আয়োজন করেন তিনি।
জন্মাষ্টমীর পরের দিন নন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে এক কিলোমিটার দূরে পুরনো ব্যবত্তাহাটে পতিতা পল্লির মাটি নিয়ে এসে মায়ের প্রতিমা গড়া হয়। এই পুজোতে মায়ের ভোগের কিছু বিশেষত্ব আছে, আমচুরের টক ও বড়ি দিয়ে ভোগ দেওয়া হয় চিন্ময়ী মাকে। ষষ্ঠীর দিন দেবীকে এক মণ ছয় সের আতপ চালের অন্নভোগ নিবেদন করা হয় ছয় রকমের তরকারির সাথে। সপ্তমীর দিন এক মণ সাত সের চালের ভোগ নানান পদ সহযোগে নিবেদন করা হয়। অষ্টমীর দিন ভোগের চালের পরিমাণ বেড়ে হয় এক মণ আট সের। আর নবমীর দিন চালের পরিমাণ হয় এক মণ নয় সের। দশমীর দিন মাকে দধিকর্মা দিয়ে বিদায় জানানো হয়। সিঁদুর খেলার পর দেবীকে ভাসান দেওয়া হয় বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে মনি পুকুরে।
তবে বর্তমানে সেই পুরনো জমিদার আমলের দুর্গা মন্ডপ ভেঙে তৈরি হয়েছে নতুন মন্ডপ। এই পরিবারের সদস্যরা কর্মসূত্রে বাইরে থাকলেও পুজোর কয়েকটা দিন সকলে বাড়ি ফিরে আসে। আদি ও প্রাচীন এই পুজো শুধুই বাড়ির পুজো নয়, এলাকার মানুষের প্রাণের পুজো। এখন বর্তমানে থিমের রমরমা থাকলেও প্রাচীন সাবেকি পুজো দেখতেও মানুষ ভিড় জমান। ব্যবত্তাবাটির এই পুজো এখনও নিয়ম-নিষ্ঠা মেনে হয় বলেই মায়ের পুজো দেখবার জন্য দূর-দুরান্ত থেকে বহু মানুষ ছুটে আসেন। সত্যি বলতে গেলে, আজও এই পুজো জমজমাট নবীন ও প্রবীণদের মিলিত প্রয়াসে।
প্রচ্ছদ চিত্র ঋণ – মাধ্যম
Discussion about this post