দোল উৎসব অবশ্য সেই প্রাচীনকাল থেকেই মাতিয়ে রাখত কলকাতাবাসীকে। পুরনো দোল আর নতুন দোলে কিন্তু খুব তফাৎ নেই। কলকাতাটা যদিও গত তিনশো বছরে আকাশ পাতাল পালটে গেছে। তবু দোলের আনন্দ ও মাতামাতিতে চিড় খায়নি এতটুকু। কলকাতার লালদিঘি আর লালবাজার– এই নামের পিছনেই নাকি রয়েছে দোলেরই মাহাত্ম্য।
লালদীঘির গা ঘেঁষেই ছিল শ্যাম রায়ের মন্দির। সে মন্দিরে রাধাকৃষ্ণকে রং মাখানো হত জবর। আর তাতেই নাকি লাল হত দিঘির জল। দিঘির উত্তরে ও দক্ষিণে ছিল দুটো দোলমঞ্চ। দক্ষিণ দিকে গোবিন্দজির আর উত্তরে রাধিকাজির। দোলের দিনে একদল লোক গোবিন্দজির পক্ষ নিয়ে সাজত রাখাল। আরেকদল লোক (পুরুষ) রাধিকাজির পক্ষ নিয়ে সাজত সখি। তারপর দুই দলে রঙে রঙে রাঙিয়ে দেওয়ার লড়াই হত। যেদিকে রাধার মঞ্চ, পরবর্তীতে সেদিকটার নাম হয়ে গেল রাধাবাজার। আর দোল উপলক্ষে বসত এক বিশাল মেলা বা বাজার। বিক্রির জন্য সেখানে পাহাড় প্রমাণ আবির, কুমকুম জড়ো হত। সেই থেকেই নাকি লাল বাজার।
যদিও মতভেদ আছে এহেন নামকরণ নিয়ে। তবুও, দোল যে ওই চত্বরের একটা বিশাল ব্যপার ছিল তা নিয়ে দ্বিমত নেই কোনো। দোলের উৎসব একদিনের হলেও তার উদযাপন হত ঢালাও। বাড়ি বাড়ি পুজো, নিমন্ত্রণে লোকে লোকারণ্য। আর দোলের খাবার হিসেবে অবধারিত থাকত চিনির মুড়কি, চিনির মঠ আর ফুটকড়াই। চিনি মাখানো ফুটকড়াই বাঁধা থাকত কোঁচড়ে। লোকে আবির মেখে ঘুরে বেড়াত আর সুযোগ বুঝে শোলার পুটির ভেতরে আবির পুরে ছুড়ে মারত মুখে। সং বেরোত এই দোল উৎসবকে ঘিরে। নানান শ্রাব্য-অশ্রাব্য গান-বাজনা হত। অবশ্য ছেলেবুড়ো একসঙ্গেই দাঁড়িয়ে পড়ত সেসব দেখতে। দোলের বিকেলে বসত যাত্রা। কোথাও হত বাঈজী নাচ। গওহর জান, মালকাজান, নূরজাহানদের আগমনে মেহফিলে তিল ধারণের জায়গা থাকত না। এভাবেই পুরোনো কলকাতার দোল মাতিয়ে রাখত সে যুগের মানুষদের।
Discussion about this post