বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের কথা তো সবার জানা। আর শীতের বিশেষ যে পার্বণটি বাঙালির সর্বাধিক প্রিয়, তা হল পৌষপার্বণ। গ্রাম বাংলার খড়ের চাল থেকে শহুরে ইটগুলো দিন গুনে চলে এই দিনের অপেক্ষায়। পৌষ সংক্রান্তিতে বাংলার ঘরে ঘরে এই উৎসবের জমকালো এক আয়োজনও হয়ে থাকে। পুর পিঠে, পাটিসাপটা, সরু চাকলি, দুধ পুলি সে এক বিস্তর সম্ভার। আর এই পিঠে উৎসবে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ উপকরণটি হল, নলেন গুড়। তবে পৌষ সংক্রান্তি দেরি থাকলেও উষ্ণতার পারা পতনে বাঙালির পাতে হাজির নলেন গুড়।
‘খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধো’ হেঁকে গ্রামের গাছিরা তাদের প্রস্তুতিপর্ব শুরুই করে দেয় নভেম্বরে। গাছ নির্বাচন করা। তারপর গাছের মাথা পরিষ্কার করে খেজুর রস বের করা হয়। উত্তরবঙ্গের হরিরামপুর ব্লকের বরভিটা গ্রামের বাসিন্দা সুরেশ সরকার। তিনিও খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন। তারপর সেই রস জাল দিয়ে নলেন গুড় তৈরি করেন প্রত্যেকটা বছর। শীতের শুরুতেই প্রতি বছর ১৪-১৫ টি খেজুর গাছ কেনেন। গাছ থেকে রস নেওয়ার পর সেই গাছকে কম পক্ষে সাতদিন বিশ্রাম দিতে হয়। যাকে শুকি বলা হয়। এই শুকি না দিলে খেজুর রসের স্বাদ আসে না, ফলে নলেন গুড়ের স্বাদও থাকে না। এরপর নতুন নলেন গুড় বাজারজাত করেন। সুরেশবাবু হরিরামপুর হাট, পাতিরাজ হাটসহ এলাকার বিভিন্ন হাটে বিক্রি করে থাকেন। নলেন গুড় ৭০ থেকে ৮০ টাকা কিলো দরে পাওয়া যায় তাঁর কাছে। বর্তমানে যে কোনও দ্রব্যের দাম আকাশ ছোঁয়া। যদিও গুড়ের দাম সেভাবে বাড়ে নি। সুরেশ বাবুর তৈরি নলেন গুড়ের একটা কদর রয়েছে এলাকায়। এমনকি পার্শ্ববর্তী গ্রামের মানুষজনও নাকি চলে আসেন সুরেশবাবুর বাড়ি গুড় কিনতে।
মহামারী পরিস্থিতি আনন্দ উৎসব পালনের জন্য যতই প্রতিকূল হোক, বাঙালি পৌষ-পার্বণকে কিন্তু এড়িয়ে যেতে পারবে না। তাই নলেন গুড়ের বাজার এই বছরেও এমন কিছু খারাপ যাবেনা না বলেই আশা রাখছেন গাছি এবং গুড় ব্যবসায়ীরা।
Discussion about this post